(বাঁ দিকে) জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদল নীতীশ কুমারের দল জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)-এর। বুধবার দুপুরে জানা যায়, হিংসাদীর্ণ মণিপুরের এন বীরেন সিংহের সরকারের থেকে সমর্থন তুলে নিচ্ছে নীতীশের দল, যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই আসরে নামেন জেডিইউ নেতৃত্ব। স্পষ্ট করে, মণিপুরে বিজেপি সরকারের থেকে সমর্থন তুলছে না তাঁরা। তবে রাজনীতিবিদদের একাংশের মতে, চাপে পড়েই ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এর চেষ্টা করল জেডিইউ।
বুধবার দুপুরে জানা যায়, রাজ্যপাল অজয়কুমার ভল্লাকে চিঠি লিখে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানান মণিপুরের জেডিইউ রাজ্য সভাপতি কেশ বীরেন সিংহ। শুধু রাজ্যপাল নন, মুখ্যমন্ত্রী বীরেন এবং বিধানসভার স্পিকারকেও বিষয়টি জানানো হয়। ২০২২ সালে মণিপুরের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়েছিল জেডিইউ। নির্বাচনে ছ’আসনে জয় পায় তারা। নির্বাচন জেতার কয়েক মাস পরেই জেডিইউর পাঁচ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেন। তবে এখনও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। সেই অভিযোগকে সামনে রেখেই মণিপুরে বিজেপির সঙ্গ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেডিইউ, এমনই জানান কেশ বীরেন। সেই খবর চাউর হতেই শোরগোল পড়ে যায়। তড়িঘড়ি আসরে নামেন জেডিইউ নেতৃত্ব। জেডিইউ-র জাতীয় মুখপাত্র রাজীবরঞ্জন প্রসাদ ওই চিঠিকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্ব জেডিইউ-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই রাজ্যপালকে চিঠি লিখে সমর্থন প্রত্যাহারের কথা জানান। পাশাপাশি, চিঠি লেখার জন্য মণিপুরের জেডিইউ রাজ্য সভাপতি কেশ বীরেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানান রাজীব।
মণিপুরে জেডিইউ-র একমাত্র বিধায়ক মহম্মদ নাসির। যদিও সমর্থন প্রত্যাহারের কারণে মণিপুরে বিপদে পড়ত না বিজেপি। ৬০ আসনের বিধানসভায় বিজেপির একার হাতেই রয়েছেন ৩৭ জন বিধায়ক। পাশাপাশি, নাগা পিপল্স ফ্রন্টের পাঁচ জন এবং তিন নির্দল বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বিজেপির হাতে। ফলে যদি বীরেনের সরকারকে বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হতে হয়, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে অসুবিধা হবে না।
কেন্দ্রে বিজেপির সহযোগী দল জেডিইউ। লোকসভা নির্বাচনে ১২টি আসন জেতে নীতীশের দল। সরকার গড়তে নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন জানায় তারা। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ফলে সরকার গড়তে সাহায্য নিতে হয় সঙ্গীদের। তাতে বড় সমর্থন ছিল জেডিইউ-র। চলতি বছরে বিহারেও রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জেডিইউ এবং বিজেপি জোট করে লড়ার কথা।
প্রায় দু’বছর ধরে উত্তপ্ত মণিপুর। উত্তর-পূর্ব ভারতের এ রাজ্যে শান্তি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর গিয়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু তার পরেও শান্তি ফেরেনি মণিপুরে। তা নিয়ে এমনিতেই চাপে রয়েছে বীরেনের সরকার। বিরোধীরা প্রথম থেকেই মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছে। মণিপুর নিয়ে কেন নীরব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস। শুধু কংগ্রেস নয়, তৃণমূল-সহ বিরোধী দলগুলিও সরব হয়েছে।