নীতীশ কুমার। —ফাইল চিত্র।
নীতীশ কুমার জোট ছাড়লেও ‘ইন্ডিয়া’র ক্ষতি হয়নি বরং ক্ষতি যা হওয়ার, তা হতে চলেছে ‘এনডিএ’রই! নীতীশের জোট বদল প্রসঙ্গে এমনটাই মত তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকের। তারা মনে করে, নীতিশের মধ্যে নেতা হওয়ার প্রধান গুণটিই নেই। তাই যথাসময়ে জনতাই তাঁকে এর উচিত শিক্ষা দেবে।
দীর্ঘ জল্পনার পর রবিবারই বিহারের বিজেপি বিরোধী জোট সরকারের হাত ছেড়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন নীতীশ। নতুন সরকারের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নবমবারের জন্য। এর পরেই ‘ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন জোট সঙ্গীদের কেউ কেউ সরব হতে শুরু করেন জেডিইউ প্রধান নীতীশের বিরুদ্ধে। কোনও কোনও দল আবার কোনও মন্তব্যই করতে চায়নি। যাঁরা বলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিহারে নীতীশের জোটসঙ্গী আরজেডির নেতা তথা বিহারের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব। তিনি বলেন, “মনে হয় আমরা এক জন ক্লান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে কাজ করতে দিয়েছিলাম। আমি বিজেপিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, নীতীশ কুমারের দলকে তাদের সঙ্গে নেওয়ার জন্য।” এর পরে কংগ্রেস বা তৃণমূলের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না এলেও ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির তরফে দলের সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে জানান, নীতীশ অবশ্যই একজন বড় নেতা। তবে তিনি জোট ছেড়ে চলে গেলেও তাতে ‘ইন্ডিয়া’ পরিবারের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না। তারা যেমন পরস্পরের সঙ্গে ছিল, তেমনই থাকবে। এর পরেই তামিলনাড়ুর শাসকদল ডিএমকেও নীতীশের জোট বদল নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়।
ডিএমকে মুখপাত্র জে কনস্টানডাইন রবীন্দ্রন বলেন, ‘‘নীতীশ কুমার বিহারের প্রবীণ নেতা হতে পারেন কিন্তু তিনি তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেছেন। ওঁর মধ্যে সামান্যতম সততা, ন্যায়পরায়ণতা আর বিশ্বাসযোগ্যতা নেই, যা একজন প্রকৃত নেতা হওয়ার জন্য জরুরি।’’
এর পরেই রবীন্দ্রন বলেন, ‘‘নীতীশ ‘ইন্ডিয়া’ ছেড়ে যাওয়ায় আসলে আমাদের (বিরোধী জোটের) লাভই হয়েছে। ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েছে বিজেপি বা তার নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র। আমরা নিশ্চিত জনতাই এর উচিত শিক্ষা দেবে।’’
প্রসঙ্গত, রবিবার এনডিএ-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিহারের নতুন জোট সরকার তৈরি করার পর নীতীশ বলেছিলেন, ‘‘যে খানে ছিলাম সেখানেই ফিরলাম। আর এখান থেকে কোথাও যাব না’’। যদিও এই নীতীশই ২০২২ সালে বিহারে কংগ্রেস, আরজেডি এবং সিপিআইয়ের সঙ্গে জোট গড়েছিলেন। আবার তিনিই লোকসভা ভোটের এক বছর আগে বিরোধী দলগুলিকে জোটবদ্ধ করার ব্যাপারে উদ্যোগীও হয়েছিলেন। নীতীশের জোট বদলের পর অবশ্য তাঁর দল জেডিইউ জানিয়েছে, বিজেপির মোকাবিলার করার মতো যথেষ্ট পরিকল্পনাই ছিল না ‘ইন্ডিয়া’র।
যদিও নীতীশের এই মন্তব্যের পর ইন্ডিয়ার বাকি শরিকেরা রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে এই ঘটনার দু’দিন আগে যখন নীতীশের জোট বদল নিয়ে জল্পনা চলছে তখন তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছিল, ঘনিষ্ঠ মহলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নীতীশ যদি ‘ইন্ডিয়া’ ছাড়েন, তাতে ক্ষতি হবে না বরং লাভই হবে। মমতা নাকি এ-ও বলেছিলেন যে, বিহারের জনমানসে নীতীশ ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। তাই তিনি চলে গেলে তেজস্বীদের কাজ করতে সুবিধাই হবে।
রবিবার মমতার সেই বক্তব্যেরই অনুরণন শোনা গেল ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিকের কণ্ঠেও।