Nitish Kumar

‘এটা ইংল্যান্ড নাকি’! কৃষকের মুখে ইংরেজি শুনে ভাষা দিবসে ধমক মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের

ভাষা দিবসে ‘বাপু সভাঘর’ অডিটরিয়ামে ‘ফোর্থ এগ্রিকালচারাল রোডম্যাপ’ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিহার সরকার। সেখানে বক্তা হিসাবে যোগ দিতে এসেছিলেন লখিসরাইয়ের কৃষক অমিত কুমার।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
পটনা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৭:১১
Nitish Kumar scolds farmer for speaking in English.

ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার জন্য কোভিড অতিমারিকেই দায়ী করেছেন নীতীশ। ফাইল চিত্র ।

এটা কি ইংল্যান্ড নাকি! কথা বলতে গিয়ে হিন্দির বদলে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার কেন? আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এক কৃষককে এ ভাবেই ধমক দিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ভাষা দিবসে ‘বাপু সভাঘর’ অডিটোরিয়ামে ‘ফোর্থ এগ্রিকালচারাল রোডম্যাপ’ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল বিহার সরকার। সেখানে বক্তা হিসাবে যোগ দিতে এসেছিলেন লখিসরাইয়ের কৃষক অমিত কুমার। নির্দিষ্ট সময়ে মঞ্চে উঠে নিজের জীবনযাত্রার বর্ণনা শোনাচ্ছিলেন তিনি। বক্তৃতা করার সময় প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায় তাঁর মুখে। এর পর তিনি জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। কী ভাবে পুণেতে প্রচুর বেতনের চাকরি ছেড়ে তিনি মাশরুম চাষকে জীবিকা হিসাবে বেছে নিলেন, সেই প্রসঙ্গই উঠে আসে অমিতের কথায়। আর এই জীবনকাহিনি শোনানোর সময় উত্তেজিত অমিতের শব্দচয়নে ঢুকে গিয়েছিল বেশ কয়েকটি ইংরেজি শব্দ। আর তাতেই বিপত্তি। কথা বলার সময় ইংরেজি ভাষার ব্যবহার করার জন্য অমিতকে রীতিমতো ধমক দিয়ে বসলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।

অমিতকে কথা বলার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে নীতীশ বলেন, ‘‘আমি আপনাকে এতগুলি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করার অসুবিধা বোঝাতে চাই। এটা কি ইংল্যান্ড? আপনি বিহারে কাজ করছেন, কৃষি অনুশীলন করছেন যা সাধারণ মানুষের পেশা।’’ নীতীশের এই কথার পরেই করতালিতে ফেটে পড়ে ওই সভাঘর।

Advertisement

তবে ইংরেজি শব্দের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার জন্য কোভিড অতিমারিকেই দায়ী করেছেন নীতীশ। তাঁর কথায়, ‘‘লকডাউনের সময় মানুষের মধ্যে স্মার্টফোনে আসক্তি তৈরি হওয়ার কারণে মানুষের ইংরেজি বলার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে আবার ইচ্ছা করে নিজের ভাষা ভুলে যায়।’’

মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়ে ক্ষমা চেয়ে আবার বক্তৃতা শুরু করতেই আবার হোঁচট খেলেন অমিত। আবার তাঁকে ধমক দিলেন নীতীশ। এ বার সুর আরও কড়া। বক্তৃতা শুরু করে সরকারি যোজনার পরিবর্তে ‘গভর্মেন্ট স্কিম’ শব্দের ব্যবহার করেছিলেন অমিত। আর তা শুনেই তাঁকে আবার থামিয়ে দেন নীতীশ। অবাক হওয়ার ভঙ্গিমায় তিনি বলেন, ‘‘এটা কী? আপনি সরকারি যোজনা বলতে পারতেন না? আমি এক জন ইঞ্জিনিয়ার এবং আমার শিক্ষার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। পড়াশোনার জন্য ইংরেজি ভাষার ব্যবহার অন্য কথা। কিন্তু সাধারণ কথা বলার সময় কেন ইংরেজি ব্যবহার করতে হবে?’’

এর পর আবার দুঃখপ্রকাশ করে নিজের বক্তৃতা কম সময়ের মধ্যে সারেন অমিত। ইংরেজি শব্দের ব্যবহার না করেই।

যদিও মুখ্যমন্ত্রীর এই ধমককে বাড়াবাড়িই মনে করছে বিহারের গেরুয়া শিবির। রাজ্য বিজেপি নেতা তথা ওবিসি মোর্চার জাতীয় সাধারণ সম্পাদক নিখিল আনন্দের মতে, ‘‘সাধারণ মানুষের ভাষণে ইংরেজি শব্দ ব্যবহারে ওঁর (নীতীশ) আপত্তি একেবারেই হাস্যকর।’’

বিহারের প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গেও ভাষা দিবসে শব্দচয়নে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার নিয়ে তরজা শুরু হয়েছিল খোদ বিধানসভায়। মাতৃভাষা দিবসে বসেছিল বিধানসভার অধিবেশন। নানা আলোচনার শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে নিজের প্রশ্ন করতে ওঠেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা। প্রশ্নটি ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিয়ে। বিধানসভা কক্ষে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্ন ইংরেজিতে করেন অগ্নিমিত্রা। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তার জবাব আসে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছ থেকে। পদ্ম বিধায়ককে মাতৃভাষা দিবসে ইংরেজিতে কথা বলার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্রাত্য। তিনি বলেন, ‘‘মাননীয়া বিধায়িকাকে ধন্যবাদ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ইংরেজিতে প্রশ্ন করার জন্য।’’ বিহারের মতো পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু একপেশে সুর চড়েনি। ব্রাত্যের সেই মন্তব্যেই বিধানসভার অধিবেশনের মাঝেই শুরু হয় বিরোধী এবং শাসকদলের কথা কাটাকাটি, অশান্তি। চলে ব্রাত্য-অগ্নিমিত্রার ছোট্ট বাগ্‌যুদ্ধও।

আরও পড়ুন
Advertisement