রাজ্যপালের হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দিচ্ছেন নীতীশ কুমার। — ছবি: পিটিআই।
গেলেন নীতীশ। আবার আসতে চলেছেন সেই নীতীশই! বিহারে চলছে এক অভূতপূর্ব ‘ডিগবাজি’র খেলা। মুখ্যমন্ত্রী পদে এ নিয়ে অষ্টম বার ইস্তফা দিলেন নীতীশ কুমার। ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিকেলেই নবম বার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথও নেবেন সেই নীতীশই।
রবিবার সাড়ে ১১টা নাগাদ পটনার রাজভবন থেকে বেরিয়ে নীতীশ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কেন ‘মহাগঠবন্ধন’ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। সেই সঙ্গেই জানিয়ে দিলেন, রাজ্যপালকে সরকার ভেঙে দেওয়ার আর্জিও জানিয়ে এসেছেন।
রবিবার সকালে পটনার ১ নম্বর অ্যানে মার্গে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে আসতে শুরু করেন জেডিইউ বিধায়করা। সেখানে দলের অন্যান্য নেতা এবং বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন নীতীশ। সূত্রের খবর, সেখানে কোন পরিস্থিতিতে নীতীশ ‘মহাগঠবন্ধন’ ছাড়তে চাইছেন, তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়। নতুন জোট তৈরি করে বিহার শাসন নিয়েও কথা হয় বৈঠকে। তার পরেই নীতীশের কনভয় রওনা দেয় রাজভবনের দিকে। সেখানে রাজ্যপালের হাতে ইস্তফাপত্র তুলে দেন নীতীশ। রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানান, সরকার ভেঙে দেওয়ার। তার পর রাজভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নীতীশ।
রাজ্যপাল রাজেন্দ্র আরলেকারের হাতে ইস্তফাপত্রটি তুলে দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘‘মহাগঠবন্ধনের সঙ্গে আমি সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই রইল আমার ইস্তফাপত্র। আমার আর্জি, আপনি সরকার ভেঙে দিন।’’ সূত্রের খবর, রাজ্যপাল নীতীশকে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ভার সামলানোর কথা বলেন। তা মেনে নিয়েছেন নীতীশ।
বেরিয়ে এসে নীতীশ বলেন, ‘‘আমি মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে এই সরকারের সমাপ্তী ঘটালাম। আমি বিভিন্ন মহল থেকে পরামর্শ পাচ্ছিলাম। আমি পুরনো জোট ত্যাগ করেছিলাম, নতুন জোট বাঁধব বলে। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি ঠিক নেই। তাই আমি ইস্তফা দিলাম। পুরনো জোট ছেড়ে আমি নতুন জোট তৈরি করব।’’ কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক ছিল না বলে কেন বললেন নীতীশ? তার জবাবও দিয়েছেন অষ্টম বার মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়া নীতীশ। তিনি বলেন, ‘‘আমি এই জোটের সঙ্গে কাজ করতে অসুবিধা বোধ করছিলাম। আমি যখন সমস্যার কথা আমার দলকে জানাই, সকলেই আমাকে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দেন।’’
ইন্ডিয়া জোটের প্রথম সূত্রধার ছিলেন তিনিই। লক্ষ্য ছিল, যে করে হোক বিজেপিকে হারানো। কিন্তু সেই নীতীশই আবার বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছেন। এই প্রসঙ্গে বিহারের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি একটা জোট তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম, কেউই কিছু করছে না।’’
রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দেওয়ার পর একটা বিষয় পরিষ্কার, নতুন করে সরকার তৈরি হচ্ছে বিহারে এবং সেই সরকারেরও প্রধান হতে চলেছেন নীতীশই। কিন্তু রাজভবন থেকে বেরিয়ে এক বারও নীতীশের মুখে বিজেপি বা এনডিএর নাম শোনা যায়নি। প্রশ্নের মুখে নীতীশ কেবল জানিয়েছেন, ‘‘সবাই আসুক, আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন!’’