নরেন্দ্র মোদী এবংউপরাজ্যপাল ভিকে সক্সেনার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রেখা-সহ শপথ নেওয়া বাকি মন্ত্রীরা। বৃহস্পতিবার। — পিটিআই
২৭ বছর পরে আবার দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হল বিজেপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্ত এবং তাঁর মন্ত্রিসভার ছ’জন সদস্য উপরাজ্যপাল ভিকে সক্সেনার কাছে শপথবাক্য পাঠ করলেন রামলীলা ময়দানে।
নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন এ বারের বিধানসভা ভোটে নয়াদিল্লি আসনে আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে হারানো জাঠ নেতা প্রবেশ সাহিব সিংহ বর্মা, জনকপুরীর বিধায়ক তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ’ আশিস সুদ, প্রভাবশালী শিখ নেতা তথা রাজৌরী গার্ডেনের বিধায়ক মনজিন্দর সিংহ সিরসা। দলিত বিধায়ক (বওয়ানা) রবিন্দর ইন্দ্ররাজ সিংহ, প্রাক্তন আপ মন্ত্রী তথা করাওয়ল নগরের বিধায়ক কপিল মিশ্র, বিকাশপুরীর বিধায়ক তথা পুর্বাঞ্চলীয় রাজপুত জনগোষ্ঠীর নেতা পঙ্কজ কুমার সিংহও শপথ নিয়েছেন মন্ত্রী হিসাবে।
জাঠ নেতা প্রবেশের নাম মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে ছিল গোড়া থেকেই। তাঁর প্রয়াত পিতা সাহিব সিংহ বর্মা নব্বইয়ের দশকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। গোয়া বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত আশিস এবং প্রাক্তন অকালি দলের নেতা মনজিন্দরকে পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখেই মন্ত্রী করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। অন্য দিকে, পূর্বাঞ্চলীয় পঙ্কজকে মন্ত্রী করার নেপথ্যে রয়েছে চলতি বছরের বিহারের বিধানসভা ভোট। প্রসঙ্গত, সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত, আতিশী মার্লেনার পরে দিল্লির চতুর্থ মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হলেন রেখা।
প্রসঙ্গত, সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, বিধানসভার বিধায়ক সংখ্যার মধ্যে মোট ১৫ শতাংশ মন্ত্রী হতে পারেন। ৭০ সদস্যের দিল্লি বিধানসভায় রেখাকে নিয়ে ১১ জনের মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার সুযোগ আছে। ২০২০ সালে অরবিন্দ কেজরীওয়াল মন্ত্রিসভায় ছিলেন ১০ জন। প্রথম বারের বিধায়ককেই যে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন করা যায়, রাজস্থানে ১৪ মাসে আগেই তা করে দেখিয়েছিলেন মোদী-শাহেরা। বেছে নিয়েছিলেন আনকোরা ভজনলাল শর্মাকে। ২৭ বছর পরে ক্ষমতা দখল করে দিল্লিতেও প্রথম বারের বিধায়ক রেখার উপরেই ভরসা রেখেছেন তাঁরা। ঘটনাচক্রে, যিনি এখনও দিল্লি পুরসভার কাউন্সিলর। শালীমার বাগ আসন থেকে প্রথম বার বিধায়ক হলেও দিল্লির পুরভোটে টানা তিন বার জিতেছেন রেখা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের পাশাপাশি বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও (ব্যতিক্রম, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ) ছিলেন মন্ত্রিসভার শপথে। ছিলেন সহযোগী টিডিপির চন্দ্রবাবু নায়ডু, জনসেনার পবনকল্যাণ, এনসিপির অজিত পওয়ার, এনপিপির কনরাড সাংমা, আপনা দলের অনুপ্রিয়া পটেল, শিবসেনার একনাথ শিন্দে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের।
এ ছাড়া প্রায় ৩০ হাজার আমজনতার ভিড় হয়েছিল রামলীলা ময়দানে। যাঁদের বড় অংশ ‘কেজরীর ভোটব্যাঙ্ক’ হিসাবে পরিচিত মহিলা এবং বস্তিবাসীরা। ছিলেন বহু সংখ্যালঘুও। সূত্রের খবর, তাঁদের সংগঠিত ভাবে নিয়ে আসা হয়েছিল রামলীলায়। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আপ প্রধান কেজরীওয়ালের শপথে আমন্ত্রণ পেয়েও এড়িয়ে গিয়েছিলেন মোদী।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লির ৭০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জয়ী হয়েছিল ৪৮টিতে। মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনা নিজে জিতলেও, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর হেরে গিয়েছে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের আপ। তারা পেয়েছে মাত্র ২২টি আসন। এর ফলে দেশে একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে যাবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যায় সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে রেখার নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার রেখা শপথ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে।