Rajya Sabha

দিল্লির আমলাদের রাশ হাতে রাখার বিল কেন্দ্র পেশ করল রাজ্যসভায়, প্রতিবাদে বিরোধী শিবির

লোকসভার মতো অবশ্য রাজ্যসভায় কেন্দ্রকে বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়তে নারাজ বিরোধীরা। দিল্লি বিল নিয়ে বিতর্কে হাজির থাকতে কংগ্রেস, আপ তাদের সাংসদদের হুইপ দিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৩ ১৭:০৫
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, অরবিন্দ কেজরীওয়াল (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী, অরবিন্দ কেজরীওয়াল (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

বিরোধীরা ওয়াকআউট করায় বৃহস্পতিবার বিনা বাধায় লোকসভায় পাশ হয়ে গিয়েছে দিল্লির আমলা নিয়োগ এবং বদলি সংক্রান্ত ‘জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি (সংশোধনী) বিল ২০২৩’। আড়াই মাস আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য যে অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) জারি করেছিল, এ বার তা রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে পুরোদস্তুর আইনের চেহারা দেওয়া অন্তিম পর্যায়ের প্রক্রিয়া শুরু হল। সোমবার বিরতির পর ২টোয় অধিবেশন ফের শুরু হলে কেন্দ্রের তরফে বিলটি পেশ করা হয়।

Advertisement

লোকসভার মতো অবশ্য রাজ্যসভায় কেন্দ্রকে বিনা যুদ্ধে জমি ছাড়তে নারাজ বিরোধীরা। দিল্লি বিল নিয়ে বিতর্কে হাজির থাকতে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (আপ)-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল তাদের সাংসদদের হুইপ দিয়েছে। মোদী সরকারের ওই বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে বিচারাধীন। শীর্ষ আদালত গত মাসে জানিয়েছে, অর্ডিন্যান্সের সাংবিধানিক বৈধতা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সঙ্গে যাচাই করা হবে, এ বিষয়ে সংসদের অধিকারের সীমাও। এই পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি বিল পাশ করিয়ে ‘দিল্লি দখলের’ জন্য কেন্দ্রের ব্যগ্রতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

রাজ্যসভায় বর্তমানে ২৩৭ জন সাংসদ আছেন। দিল্লি বিলটি পাস করানোর জন্য সরকারের ১১৯ জন সাংসদের সাহায্য প্রয়োজন। বিজেপি এবং তার সহযোগী দলগুলির ১০৫ জন সাংসদ আছেন রাজ্যসভায়। অন্ধ্রপ্রদেশের শাসকদল ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং ওড়িশার শাসকদল বিজু জনতা দল (বিজেডি)-র ৯ জন করে সাংসদ দলীর নির্দেশ মেনে এই বিলে মোদী সরকারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষেও শেষ পর্যন্ত মোদী সরকারের জয় নিশ্চিত বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা।

প্রসঙ্গত, গত ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছিল, আমলাদের রদবদল থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। এর পর হঠাৎ গত ১৯ মে গভীর রাতে অর্ডিন্যান্স এনে ১০ পাতার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাতে বলা হয়, ‘জাতীয় রাজধানী সিভিল সার্ভিসেস কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হচ্ছে। আমলাদের নিয়োগ ও বদলির ব্যাপারে তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। অধ্যাদেশে জানানো হয়, (দিল্লির) মুখ্যমন্ত্রী হবেন এর চেয়ারপার্সন। সদস্য হিসেবে থাকবেন মুখ্যসচিব এবং প্রিন্সিপাল স্বরাষ্ট্রসচিব। নিয়োগ ও বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত এই কর্তৃপক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত করবেন। মতবিরোধ হলে শেষ কথা বলবেন উপরাজ্যপাল।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে পাশ কাটিয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতার রাশ হাতে রাখার জন্য মোদী সরকারের এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ‘সক্রিয়তা’ দেখিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে কেন্দ্রের অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় অবিজেপি দলগুলির সমর্থন চেয়েছেন তিনি। আবেদন জানিয়েছেন, ওই অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ী রূপ দিতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে বিরোধী দলগুলি যেন ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার বিরোধিতা করে। মে মাসেই নবান্নে এসে মমতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন কেজরী। তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের তরফে সহায়তার আশ্বাস মিললেও প্রাথমিক ভাবে কংগ্রেস অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কেজরীর পাশে দাঁড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুতে বিরোধী নেতৃত্বের বৈঠকের আগে রবিবার কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয়, বিতর্কিত ওই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্থায়ী’ আইনে পরিণত করতে মোদী সরকার সংসদে বিল আনলে তার বিরোধিতা করা হবে।এর পরেই কেজরী বেঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement