ফাইল চিত্র।
কোনও বিতর্কে জড়ানো চলবে না। আপাতত স্বাধীনতা দিবস পর্যন্ত দিল্লিতেই থাকতে হবে। সরকারের কাজে গতি আনতে নতুন মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, সামনেই সংসদের বাদল অধিবেশন। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা মন্ত্রকে থেকে কাজ বুঝে নিতে হবে।
গতকাল মন্ত্রিসভার রদবলের পরে প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তার পরে সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, গত কয়েক বছরে অনেক মন্ত্রীই অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করে অকারণ বিতর্কে জড়িয়েছেন। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রী নতুন মন্ত্রীদের বিতর্ক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’। সাত বছর পরে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা স্বীকার করে নিয়ে, জাতপাতের সমীকরণ রক্ষা ও সব রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে, সেই ‘ম্যাক্সিমাম গভর্নমেন্ট’-ই তৈরি করতে বাধ্য হলেন মোদী। মন্ত্রিসভার সর্বাধিক ৮১ জন সদস্য থাকতে পারেন। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পরে মন্ত্রীর সংখ্যা ৭৮-এ গিয়ে পৌঁছেছে। কিন্তু বিরোধীদের সঙ্গে প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, এতে কি সরকারের কার্যকারিতা বাড়বে? বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানির বক্তব্য, মোদী সরকারের বড় মাপের মন্ত্রিসভার রদবদল মূলত মাঝারি ও কমবয়সি মন্ত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। গতকাল মন্ত্রিসভার প্রায় সমস্ত মন্ত্রীর দফতর কমবেশি রদবদল হলেও ‘বিগ ফোর’ বা চারটি প্রধান মন্ত্রকে কোনও বদল হয়নি। স্বরাষ্ট্র, অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে আগের মন্ত্রীরাই রয়েছেন। গোটা বিষয়টাকে ‘ভেজা পটকা’-র সঙ্গে তুলনা করে চেলানির দাবি, এ থেকে স্পষ্ট যে গত সাত বছর ধরে সরকার যে ভাবে চলছে, বর্তমান সরকারের বাকি সময়টুকুও সে ভাবেই চলবে।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, নবীন নেতাদের বড় মন্ত্রক সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজ, দক্ষতা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার নিরিখেই এই দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁরা। কেন্দ্রের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘বর্তমান মন্ত্রী পরিষদে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কোনও মন্ত্রীর বয়স সত্তরের ঘরে নয়। প্রকাশ জাভড়েকরের বয়স এ বছরেই ৭০ বছর হয়েছিল। তিনি বাদ গিয়েছেন।’’ জাভড়েকরের বাদ যাওয়ার পিছনে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা সামাল দিতে না পারার ‘ব্যর্থতা’-ও রয়েছে বলে অনেকের মত। তাঁদের দাবি, সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারেই তথ্য-সম্প্রচারে তরুণ নেতা অনুরাগ ঠাকুরকে নিয়ে আসা হল।
কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী সরকার শুধুই ভাবমূর্তি তৈরি করবে? না কি কাজের কাজও কিছু করবে? কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এই রদবদলের পরে কি দেশে কোভিডের প্রতিষেধদের টিকার অভাব মিটে যাবে?’’ মন্ত্রিসভা ঢেলে সাজানোর পরে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক বসেছে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া কোভিডের টিকার অভাব মেটানো নিয়ে সদূত্তর দিতে পারেননি।
গত সাত মাস ধরে কৃষক সংগঠনগুলি তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর ফের কৃষকদের আলোচনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তোমরের যুক্তি, ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিলে কিছু বদল করা হচ্ছে। এ বার এই তহবিলের টাকা কৃষি পণ্য বাজার কমিটিগুলিও কাজে লাগাতে পারবে। কৃষকদের বোঝা উচিত, বাজার কমিটি তুলে দেওয়া হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা ভুল। কিন্তু কৃষকদের আলোচনায় আসার নতুন কোনও প্রস্তাব টেবিলে রাখতে পারেননি। কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে না বলেই ফের স্পষ্ট করেছেন তিনি।