Meghalaya Assembly Election 2023

ছয় আসনে কংগ্রেসের পথের কাঁটা তৃণমূল, তিন আসনে উল্টো! মেঘালয়ের অঙ্কে কাটাকুটির মেঘ

মেঘালয়ে ৫টি করে আসনে জিতেছে তৃণমূল এবং কংগ্রেস। আরও ৯টি আসনে তাদের মিলিত ভোট বিজয়ী প্রার্থীদের ভোটের থেকে বেশি। এই অঙ্ক সামনে আসতেই আবার তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছে কংগ্রেস।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৩ ২০:৫৩
Meghalaya Assembly Election 2023: The electoral mathematics of vote splitting between Congress and TMC

মেঘালয়ে ভোট কাটাকুটির অঙ্ক। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ভোটের প্রচারে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মেঘালয়ের জনতাকে বলেছিলেন, ‘‘সাবধান, বিজেপিকে জেতাতেই এখানে ভোটে লড়তে এসেছে তৃণমূল’’! সেই দিন মেঘালয়ে দাঁড়িয়েই তৃণমূলের হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাহুলের দিকে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন ছিল, ‘‘আপনারাও কি পশ্চিমবঙ্গে ভোট লড়েন বিজেপিকে জেতানোর জন্য?’’ এই চাপান-উতোর চলছে মেঘালয়ের ফল ঘোষণার পরেও।

মেঘালয় বিধানসভায় মোট আসন ৬০। একটিতে ভোট হয়নি। বাকি ৫৯টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে এনপিপি। ২৬টি। দ্বিতীয় স্থানে ইউডিপি। পেয়েছে ১১ আসন। তার পরেই কংগ্রেস এবং তৃণমূল। ৫টি করে মোট ১০টি আসনে জিতেছে এই দুই দল। ভোটের আসন ভিত্তিক বিস্তারিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আরও ৯টি আসনে কংগ্রেস আর তৃণমূলের মিলিত ভোট সংশ্লিষ্ট আসনে বিজয়ী প্রার্থীর পাওয়া ভোটের তুলনায় বেশি। ওই ৯টি আসনের মধ্যে ৬টিতে কংগ্রেস এবং ৩টিতে তৃণমূল দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই ৯ আসনের মধ্যে ৬টি আসনে জিতেছে প্রধান শাসকদল তথা নতুন বিধানসভার বৃহত্তম দল এনপিপি। ২টিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল ইউডিপি এবং ১টিতে পিডিএফ। ঘটনাচক্রে, এই তিনটি দলই বিদায়ী জোট সরকারে বিজেপির সহযোগী ছিল। এবং নাটকীয় কিছু না ঘটলে, আগামী জোট সরকারেও এরা থাকছে। বিজেপি গত বারের মতো এ বারের বিধানসভাতেও ২টি আসনে জিতেছে। কিন্তু দিল্লির ক্ষমতার দৌলতে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে দুর্বল সংখ্যা নিয়েও সবল ভূমিকাতেই থাকে তারা।

Advertisement

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

যে ৯টি আসনে কংগ্রেস আর তৃণমূলের মিলিত ভোট বিজয়ী প্রার্থীর ভোটের থেকে বেশি, তার মধ্যে ৬টি আসন গারো পাহাড়ের জেলাগুলিতে। তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা এবং মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি নেতা কনরাড সাংমা এই অঞ্চলেরই নেতা। বাকি ৩টি আসন খাসি পাহাড় অঞ্চলের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভিনসেন্ট পালা, তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন স্পিকার চার্লস পিংরোপ এবং বিদায়ী স্পিকার তথা ইউডিপি প্রধান মেতবা লিংডোর প্রভাব রয়েছে এই অঞ্চলের জেলাগুলিতে।

পূর্ব খাসি জেলার মাওফালং আসনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোট পেয়ে পিডিএফ প্রার্থী জিতেছেন। কংগ্রেসের ঝুলিতে গিয়েছে প্রায় ৬ হাজার ভোট। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছেন দেড় হাজার। রাংসাকোনা আসনে তৃণমূল নেতা মুকুলের ভাই জেনিথ এনপিপি প্রার্থীর কাছে ৭৮৮ ভোটে হেরেছেন। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছেন প্রায় ৯০০ ভোট!

তা ছাড়া, ভোট কাটাকুটির অঙ্কে কয়েকটি আসনে নামমাত্র ব্যবধানে জিতেছেন কংগ্রেস বা তৃণমূল প্রার্থী। বা বলা ভাল, একটুর জন্য হার বেঁচেছে তাঁদের। যেমন উত্তর-গারো জেলার দেদেংগ্রে আসনে মাত্র ১৯ ভোটে হেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাডের ভাই তথা এনপিপি প্রার্থী জেমস সাংমা। তিনি পেয়েছেন ১৫,৬৮৪ ভোট। জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর ঝুলিতে গিয়েছে ১৫,৭০২টি। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী ৩৬৭ ভোট পেয়েছেন।

আবার উত্তর গারো জেলার বাজেংডোবা, দক্ষিণ গারো জেলার রোঙ্গারা-সিজুর মতো আসনে আক্ষরিক অর্থেই ত্রিমুখী লড়াইয়ে জিতেছেন বিজেপির ‘বন্ধু’ দলের প্রার্থী। বাজেংডোবায় কংগ্রেস ২৬ এবং তৃণমূল ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। জয়ী ইউডিপি প্রার্থী পেয়েছেন ৩৪ শতাংশ। রোঙ্গারা-সিজুতে জয়ী এনপিপি প্রার্থী পেয়েছেন ৩৯ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস এবং তৃণমূল প্রার্থী যথাক্রমে ২৮ এবং ২৬ শতাংশ!

এ বার মেঘালয়ের ভোট প্রচারে ধারাবাহিক ভাবে অংশ নিয়েছেন এআইসিসি সম্পাদক রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শুধু মাত্র ভোটের অঙ্ক যোগ করে দেখলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে না। গত দু’দশক ধরে মেঘালয়ে তৃণমূলের কোনও সক্রিয়তা ছিল না। ভোটের বছর খানেক আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা-সহ কংগ্রেসের বেশ কয়েক জন বিধায়ক এবং নেতাকে তারা ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। ভোটে তার সুযোগ নিয়েছে বিজেপি এবং তাদের বন্ধু দলগুলি।’’ রণজিতের কথায়, ‘‘আমাদের দলে থাকার সময় মুকুল গোটা মেঘালয়ের নেতা ছিলেন। এখন গারো পাহাড়ের একটি অংশের নেতায় পরিণত হয়েছেন। দু’টি আসনে দাঁড়িয়ে তিনি একটিতে হেরেছেন। তাঁর স্ত্রী, ভাই হেরেছেন। ভোট কাটাকুটির যোগবিয়োগের অঙ্ক দেখে সবটা বোঝা না গেলেও, বাস্তব পরিস্থিতি বলছে আলাদা লড়াই না হলে তাঁরা কেউই হারতেন না।’’

অন্য দিকে, তৃণমূল মুখপাত্র তথা বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘বিজেপির হয়ে আমরা মেঘালয়ে গিয়েছি এমন অভিযোগের কোনও অর্থই হয় না। ভিত্তিহীন অভিযোগের উত্তরও দেওয়া যায় না। আর কংগ্রেস জিততে পারেনি বলে আমাদের দোষ দেবে কেন। একটা সর্বভারতীয় দল হিসাবে কোথায় কার সুবিধা হবে সেটা ভেবে আমরা নির্বাচনে লড়ব নাকি!’’

সামগ্রিক ভাবে প্রায় এক দশক পরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আর একটি রাজ্যে নজরকাড়া ফল করেছে মমতার দল। ২০১২ সালে মণিপুরের বিধানসভা নির্বাচনে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। তারা জিতেছিল ৭টি আসনে। বাংলার বাইরে এ পর্যন্ত কোনও বিধানসভা ভোটে সেটিই তৃণমূলের সবচেয়ে ভাল ফল। মেঘালয়ে সে রেকর্ড তারা ছুঁতে পারেনি। কিন্তু ৬০ আসনের মধ্যে ৫৬টিতে লড়ে প্রায় ১৩.৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে জোড়াফুল শিবির। মেঘালয়ের ৫টি বিধানসভা কেন্দ্র তাদের দখলে এসেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৮-র বিধানসভা ভোটে মেঘালয়ে মাত্র ৮টি আসনে লড়েছিল তৃণমূল। ভোট পেয়েছিল ০.৩৫ শতাংশ।

Advertisement
আরও পড়ুন