অভিষেকের বাংলোয় মমতার সঙ্গে কমলনাথ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
বিরোধী জোটে সিলমোহর দিতে দিল্লি সফরে গিয়েছেন। বুধবার তা নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। তার আগে মঙ্গলবার দিল্লিতে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কমল নাথের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন মমতা। এই সময় কমলনাথের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ মমতা কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর, ২০০১ সালে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের জোট গড়ার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কমলনাথের। তাই সনিয়ার সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনার আগে কমলনাথের সঙ্গে পরামর্শ করেই মমতা এগোতে চাইছেন বলে জল্পনা।
মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ দিল্লিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলোয় মমতার সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছন কমলনাথ। সেখানে দীর্ঘ ক্ষণ কথা হয় দু’জনের মধ্যে। দু’পক্ষের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে তৃণমূল নেত্রী কোনও মন্তব্য করেননি যদিও। তবে ২০২৪-এ জোট গড়ার প্রসঙ্গ যে তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে। মমতার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমে কমলনাথ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাতে এসেছিলাম। মূল্যবৃদ্ধি, আইন-শৃঙ্খলা-সহ একাধিক বিষয়ে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। ২০২৪-এর আগে জোট গড়া সম্ভব কি না, তা নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলব। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়ে দিয়েছেন, মানুষ পাশে থাকলে, যে কোনও শক্তিকেই রোখা সম্ভব।’’
মমতা কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এলেও, তাঁর সঙ্গে কমলনাথের সম্পর্ক বরাবরই ভাল। সর্বভারতীয় রাজনীতিতে মমতাকে সঙ্গে নিয়ে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে সওয়াল করে আসছেন তিনি। বিজেপি-র আগ্রাসী প্রচার সত্ত্বেও এ বছর তৃতীয় বার মমতা বাংলায় ক্ষমতায় ফেরার পর মমতাকে ‘দেশনেত্রী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেই সময় কমলনাথ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দেশনেত্রী। পর পর তিন বার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হলেন তিনি। কঠিন লড়াই পেরিয়ে এই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন উনি।’’ তাই ২০২৪-এ বিরোধী জোটের চালকের আসনে মমতাকে বসানোর ক্ষেত্রে কমলনাথ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেন বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
তবে শুধু কমলনাথই নন, মঙ্গলবার মমতার সঙ্গে দেখা করেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মাও। তাঁদের এই বৈঠক অন্য কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজীবন কংগ্রেসি আনন্দের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের দূরত্ব বেড়েছে। বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দাবি জানিয়ে যে ২৩ জন কংগ্রেস নেতা সনিয়াকে চিঠি দিয়েছিলেন, আনন্দ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আনন্দের সাফ কথা, মোদী-শাহকে টক্কর দিতে হলে বিরোধী হিসেবে মজবুত অবস্থান দরকার। বিরোধী নেতাকে আরও বলিষ্ঠ হতে হবে, নেতা-কর্মী তো বটেই, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকতে হবে। তাই নামমাত্র নেতা নয়, সর্বকালীন এক জন নেতার প্রয়োজন দলের।
সনিয়াকে ওই চিঠি পাঠানোর পর থেকেই গাঁধী পরিবার এবং তাঁদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরে চলে এসেছেন আনন্দ। যদিও নিজের অবস্থানে অনড় তিনি। তাই মমতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘিরেও জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও সংবাদমাধ্যমে আনন্দ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। দীর্ঘ দিন একসঙ্গে কাজ করেছি আমরা। সাম্প্রতিক নির্বাচনে উনি যে ভাবে লড়াই করেছেন এবং জিতেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। জয়ের পর এই প্রথম দিল্লি এলেন। তাই ওঁর সঙ্গে চা খেতে এসেছিলাম।’’
দিল্লিতে থাকাকালীন আগামী দিনে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান শরদ পওয়ার, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব এবং আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গেও দফায় দফায় বৈঠক করবেন মমতা।