গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সুপ্রিম কোর্টের পরে মহারাষ্ট্রে ‘শিবসেনা দখলের’ লড়াই গেল বম্বে হাই কোর্টে। উদ্ধব ঠাকরের শিবির সোমবার সকালে বিধানসভার স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন। বেলা গড়াতেই স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানাল মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের শিবিরও। তবে সম্পূর্ণ অন্য দাবি তুলে। বম্বে হাই কোর্টে।
গত ১০ জানুয়ারি মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকার তথা বিজেপি বিধায়ক নারওয়েকর তাঁর ‘রায়’ ঘোষণা করে জানিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীই ‘আসল শিবসেনা’। তাই উদ্ধব ঠাকরের কোনও আইনি ক্ষমতাই নেই শিন্ডে-সহ ১৬ ‘প্রথম দফার বিদ্রোহী’ বিধায়ককে বহিষ্কারের। তবে শিন্ডেদের ‘আসল শিবসেনা’র মর্যাদা দিলেও স্পিকার উদ্ধব অনুগামী ১৭ বিধায়কের পদ খারিজ করেননি। শিন্ডেসেনার তরফে স্পিকারের সেই সিদ্ধান্তকেই বম্বে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার সকালে শীর্ষ আদালতে স্পিকার নারওয়েকরের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল উদ্ধব শিবিরের তরফে। শিবসেনার ভাঙনের মধ্যে দিয়ে ২০২২-এর জুনে উদ্ধব সরকারের পতন হয়েছিল। কুর্সিতে বসেছিলেন শিন্ডে। সেই সময়ে দলের অধিকারের দাবি করতে গিয়ে দু’পক্ষই অন্য শিবিরের বিধায়কদের পদ খারিজের আবেদন করে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবের তরফে প্রথমে এ বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল।
বিজেপির সাহায্য নিয়ে উদ্ধবকে ক্ষমতাচ্যুত করা শিন্ডে এবং তাঁর সঙ্গে প্রথম দফায় ‘বিদ্রোহী’ আরও ১৫ জন শিবসেনা বিধায়কের সেই পদক্ষেপ ‘দলত্যাগ বিরোধী কার্যকলাপ’ ছিল কি না, গত ১১ মে সুপ্রিম কোর্ট তা বিবেচনার ভার দিয়েছিল মহারাষ্ট্র বিধানসভার স্পিকারকে। গত ১০ জানুয়ারি স্পিকার তাঁর রায়ে জানান, মুখ্যমন্ত্রী শিন্ডের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীই ‘আসল শিবসেনা’। তাই উদ্ধব গোষ্ঠীর কোনও আইনি ক্ষমতাই নেই শিন্ডে-সহ ১৬ বিধায়ককে বহিষ্কারের।
প্রসঙ্গত, শিবসেনার ভাঙনপর্বের সময়ই শিন্ডে-সহ ১৬ শিবসেনা বিধায়ককে ‘অবস্থান’ স্পষ্ট করতে ২০২২ সালের জুন মাসে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত স্পিকার (ডেপুটি স্পিকার) তথা এনসিপি বিধায়ক নরহরি সীতারাম জিরওয়াল। কিন্তু সে সময় কিন্তু শিন্ডে শিবির জানিয়েছিল, ডেপুটি স্পিকারকে সরানোর জন্য আগেই বিধানসভায় প্রস্তাব পেশ করেছেন তাঁরা। তাই তাঁর কৈফিয়ত চাওয়ার অধিকার নেই। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়কে হাতিয়ার করেছিল শিন্ডেসেনা।
এর পরে ২০২৩ সালের ১১ মে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ জানায়, শিন্ডে-সহ ১৬ বিধায়কের পদ বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার। অবশ্য তার আগেই সংখ্যাগরিষ্ঠ শিবসেনা বিধায়ক শিন্ডেশিবিরে যোগ দেন। তাঁদের সমর্থন নিয়ে এনসিপি বিধায়ক জিরওয়ালকে সরিয়ে স্পিকার হন বিজেপির নারওয়েকর।
দায়িত্ব পেয়েই উদ্ধব গোষ্ঠীর বিধায়ক সুনীল প্রভুকে সরিয়ে শিবসেনার চিফ হুইপ শিন্ডেসেনার অনিল পরবের নিয়োগে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন নারওয়েকর। এর পরে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শিন্ডেগোষ্ঠীকে ‘আসল শিবসেনা’র মর্যাদা দিয়ে শিবসেনার পতাকা এবং নির্বাচনী প্রতীক (তির-ধনুক) ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল। উদ্ধবের দলের নাম দেওয়া হয়, শিবসেনা (ইউবিটি)। বিধানসভার স্পিকারের রায়েও শিন্ডের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ হওয়ায় লড়াই গড়াল আদালতে।