Hijab Row in Karnataka

কর্নাটকে আবার হিজাব পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুসলিম ছাত্রীরা, সিদ্ধান্ত কংগ্রেস সরকারের

২০২২ সালে কর্নাটকের একটি কলেজে কয়েক জন হিজাব পরিহিত ছাত্রীকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এর পর জারি হয় ‘হিজাব নিষিদ্ধ’ নির্দেশিকা। তা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৫০

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গত মে মাসে বিধানসভা ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ‘বিবেচনার’ আশ্বাস দিয়েছিলেন। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া ঘোষণা করলেন, পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে সে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার উপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হল। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কে, কোথায় কী পোশাক পরবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ।’’

Advertisement

মাইসুরুতে একটি কর্মসূচিতে শুক্রবার রাতে সিদ্দারামাইয়া বলেন, ‘‘আর কোনও বাধা রইল না। এ বার হিজাব পরে যে কোনও জায়গায় যাওয়া যেতে পারে।’’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের ‘বিচারাধীন’। ফলে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার বিভিন্ন আইনি দিক খতিয়ে দেখেই পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি কর্নাটকের উদুপিতে একটি প্রি-ইউনিভার্সিটিতে কয়েক জন হিজাব পরিহিত পড়ুয়াকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরিহিতরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না। সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য জুড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয়ে পড়েন। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সমস্ত স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি কর্নাটক সরকারের শিক্ষা দফতর এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। ঘোষণা করা হয়, কমিটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করার আগে পর্যন্ত ছাত্রীরা কেবলমাত্র ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবেন। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয়— কিছুই পরার অনুমতি নেই।

তৎকালীন বিজেপি সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েক জন ছাত্রী কর্নাটক হাই কোর্টে রিট মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁরা আদালতকে জানান, হিজাব পরা তাঁদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনও ভাবেই তা বাতিল করা যায় না। সে বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি কর্নাটক হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ অন্তর্বর্তী রায়ে বলে, ‘‘যত দিন না রায় ঘোষণা হচ্ছে, কোনও পড়ুয়া ধর্মীয় প্রতীকমূলক কোনও পরিধান পরে সরকারি স্কুল-কলেজে আসতে পারবেন না।’’

এর পর ২০২২-এর মার্চ মাসে কর্নাটক হাই কোর্ট মুসলিম ছাত্রীদের আবেদন খারিজ করে জানায়, হিজাব পরা ইসলামে ‘বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন’-এর মধ্যে পড়ে না। এর পর আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু গত অক্টোবরে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ ‘খণ্ডিত রায়’ দেওয়ায়, মামলাটি এখন শীর্ষ আদালতেরই উচ্চতর বেঞ্চে গিয়েছে। শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় কর্নাটকের বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ’ সংক্রান্ত নির্দেশ বহাল ছিল। এ বার সেই নির্দেশ প্রত্যাহার নিল মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সরকার।

Advertisement
আরও পড়ুন