— প্রতীকী চিত্র।
মহারাষ্ট্রের ভোটে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় ফিরিছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। কিন্তু এখন দেবেন্দ্র ফডণবীসের সরকার রাজ্যের ঋণের বোঝা সামলে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তা থেকে নজর ঘোরাতেই কি বিজেপি ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছে?
মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি নিয়ে বিতর্ককে কেন্দ্র করে গত কাল সন্ধ্যায় নাগপুরে হিংসার পরে কংগ্রেস, শরদ পওয়ারের এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা (ইউবিটি) অভিযোগ তুলল, রুটিরুজির সমস্যা থেকে রাজকোষের করুণ দশা— ঘোরাতেই বিজেপি তিনশো বছর আগের ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে। কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরার প্রশ্ন, আমজনতার ‘জেব’ বা পকেট খালি বলেই কি ঔরঙ্গজ়েব নিয়ে বিতর্ক?
মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসই প্রথম রাজ্যের খুলদাবাদ থেকে ঔরঙ্গজ়েবের সমাধি সরানোর দাবি তুলেছিলেন। এই সমাধির বিরুদ্ধে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ গত কাল প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল। সেখান থেকে নাগপুর শহরে হিংসা ছড়ায়। গোষ্ঠী সংঘর্ষ বাধে। অনেক বাড়িতে ভাঙচুর হয়। আগুন লাগানো হয় বহু গাড়িতে। আজও নাগপুরে কার্ফু জারি ছিল। পুলিশ অন্তত ৫০ জনকে আটক করেছে। ফডণবীসের দাবি, নাগপুর তাঁর নিজের এলাকা, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর লোকসভা কেন্দ্র। নাগপুরেই আরএসএসের সদর দফতর। ৩০ মার্চ নাগপুরে একটি অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের একই মঞ্চে হাজির থাকার কথা। ফডণবীসের দাবি, সম্প্রতি ‘ছাবা’ সিনেমায় শম্ভাজি মহারাজের উপরে ঔরঙ্গজ়েবের অত্যাচার দেখানোর ফলে মানুষের মধ্যে আবেগ তৈরি হয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সমাধি সরানোর দাবি তুলে আবেগে উস্কানি দিয়েছেন।
শিবসেনা (ইউবিটি)-র নেত্রী প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীর অভিযোগ, হিংসায় উস্কানি, রাজ্য অস্থিরতা তৈরি করা, মানুষকে পুরনো ইতিহাসে ব্যস্ত রেখে রাজ্যের আর্থিক অবস্থা, ঋণের বোঝা, বেকারত্ব, কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তার ফলে মহারাষ্ট্র থেকে গুজরাতে সমস্ত লগ্নি চলে যাচ্ছে। এনসিপি (শরদ পওয়ার) নেত্রী সুপ্রিয়া সুলের মন্তব্য, এত দিন মহারাষ্ট্র প্রগতিশীল রাজ্য বলে পরিচিত ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ের মন্তব্য, যদি ঔরঙ্গজ়েবের মৃত্যুর ৩০০ বছর পরেও তা নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়, তা হলে ঘুম ভাঙার সময় হয়েছে। আধুনিক ভারত পুরনো বিদ্বেষের ইতিহাসের উপরে তৈরি করা যায় না।
লেখিকা রাণা সফভি বলেন, ‘‘ঔরঙ্গজ়েবকে তাঁর ইচ্ছে মতো সাধারণ ভাবে কবরস্থ করা হয়েছিল। তাঁর শরীর কবেই ধুলোয় মিশে গিয়েছে। পরে হায়দরাবাদের নিজ়াম সেখানে মার্বেল পাথরে কাঠামো তৈরি করেছিলেন। সেই কাঠামো সরালে ঔরঙ্গজ়েবের কিছু হবে না। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ৩০০ বছর আগে প্রয়াত কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে দেশে আগুন জ্বালানো বন্ধ করতে না পারলে, অনেক দেরি হয়ে যাবে।’’