Gyanvapi Mosque Case

জ্ঞানবাপীর সমীক্ষা স্থগিত রাখতে বলল সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টে যাওয়ার সময় মিলল মসজিদ কমিটির

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা আদালতকে জানান, সমীক্ষায় কেবল ছবি তোলা হচ্ছে এবং কিছু মাপজোক করা হচ্ছে। কিন্তু মসজিদের কোনও ইঁটও আগামী এক সপ্তাহের জন্য নড়বে চড়বে না বলে জানান তিনি। বিষয়টি নথিবদ্ধ রাখে শীর্ষ আদালত।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ১৩:৩৪
Gyanvapi mosque survey, Supreme Court stays Varanasi court order till Wednesday

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্থগিত জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষার কাজ। —ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত হয়ে গেল বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষার কাজ। শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের ফলে বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সমীক্ষা সংক্রান্ত কোনও কাজ করতে পারবে না ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা এএসআই)।

সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল এএসআই-এর সমীক্ষার কাজ। এই সমীক্ষা সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় মসজিদ কমিটি। মসজিদ কমিটির হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী হাজেফা আহমদি। তিনি মামলাটির দ্রুত শুনানির আর্জি জানান। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেটা আদালতকে জানান, সমীক্ষায় কেবল ছবি তোলা হচ্ছে এবং কিছু মাপজোক করা হচ্ছে। কিন্তু মসজিদের কোনও ইঁট পর্যন্ত আগামী এক সপ্তাহের জন্য নড়বে চড়বে না বলে জানান তিনি। বিষয়টি নথিবদ্ধ রাখে আদালত। এই প্রসঙ্গে দেশের প্রধান বিচারপতি সলিসিটর জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, “বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে আবেদন জানানোর জন্য মসজিদ কমিটিকে সময় দেওয়া প্রয়োজন।” সলিসিটর জেনারেলকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশের বিষয়টি এএসআই কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিতে বলে শীর্ষ আদালত।

Advertisement

শুক্রবার বারাণসী জেলা আদালত এএসআই-কে জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে বিতর্কিত ওজুখানায় পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’ এবং সন্নিহিত এলাকায় এখনই কোনও সমীক্ষা হবে না বলে জানিয়েছিল আদালত। আগামী ৪ অগস্টের মধ্যে সমীক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। পুরাতাত্ত্বিক পরীক্ষার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল চার হিন্দু মহিলা ভক্তের তরফে। অন্য দিকে, মসজিদ চত্বরে যে কোনও রকম সমীক্ষার বিরোধিতা করেছিল ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’। এ বিষয়ে দু’পক্ষের মতামত শোনার পরে গত ১৪ জুলাই রায় সংরক্ষিত রেখেছিলেন বিচারক অজয় কুমার বিশ্বেস।

তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’-এর বয়স নির্ধারণের জন্য হিন্দু পক্ষের তরফে পরীক্ষার আবেদন জানানো হলেও বারাণসী জেলা আদালত গত ১৪ অক্টোবর তা নাকচ করে দিয়েছিল। মসজিদ চত্বরের ওজুখানায় শিবলিঙ্গের উপস্থিতি দাবি করে তার বয়স জানার জন্য কার্বন ডেটিং পরীক্ষার যে আবেদন জানানো হয়েছিল, বিচারক বিশ্বেস তা খারিজ করে বলেছিলেন, ‘‘শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য জ্ঞানবাপী চত্বরে কোনও রকম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ করা যাবে না।’’ তাঁর সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হয়েছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন।

এরই মধ্যে গত মে মাসে হিন্দু মহিলা ভক্তদের তরফে ‘সিল’ করা ওজুখানা এলাকার বাইরে ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার’ আবেদন জানানো হয়েছিল। আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সেই দাবি মেনে নেন বিচারক বিশ্বেস। এই মামলায় নিযুক্ত উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি রাজেশ মিশ্র শুক্রবার বলেছিলেন, ‘‘কোনও হিন্দু মন্দিরের জায়গায় মসজিদ গড়া হয়েছে কি না, তা সমীক্ষা করে দেখবেন আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞেরা।’’প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা এবং তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন, তারই প্রেক্ষিতে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। এর পরেই হিন্দু পক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর।

সেই সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শেষ হওয়ার পরে ২০২২ সালের ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পায় বারাণসী জেলা আদালত। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিয়োগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে। অন্য দিকে, হিন্দুপক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল। ‘শিবলিঙ্গ’-এর বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে। তাঁরা জানাচ্ছেন, মৃত প্রাণী বা উদ্ভিদের দেহাংশ এবং জীবাশ্মের বয়স নির্ধারণে কার্যকরী হলেও এই পদ্ধতিতে কোনও প্রাচীন শিলা বা প্রস্তরখণ্ডের বয়স নির্ধারণ করা কঠিন।

Advertisement
আরও পড়ুন