গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বুধবার বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘সিল’ করা একটি তহখানায় হিন্দু ভক্তদের পুজো করার অনুমতি দিয়েছিল বারাণসীর জেলা আদালত। বৃহস্পতিবার জেলা বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেসের সেই নির্দেশকে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাল ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’। ঘটনাচক্রে, প্রায় একই সময় বারাণসী আদালতের নির্দেশ মেনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘ব্যাস কা তহখানা’-য় শুরু হয়ে গেল আরতি এবং পুজোপাঠ।
মসজিদ চত্বরের দক্ষিণ অংশের ‘ব্যাস কা তহখানা’-য় আরতি এবং পুজোয় আপত্তি জানিয়ে মসজিদ কমিটির তরফে বৃহস্পতিবার হাই কোর্টকে বলা হয়েছে, ১৯৩৭ সালে জ্ঞানবাপী সংক্রান্ত বিবাদের রায় মুসলিমদের পক্ষেই গিয়েছিল, তাই ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-কে দিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করা করানো যায় না। ২০২২ সালে বারাণসী আদালতের নির্দেশে করা ‘অ্যাডভোকেট কমিশনার’-এর রিপোর্টকেও বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মুসলিম পক্ষের দাবি। এই মামলার দ্রুত শুনানি চেয়ে বুধবার সুপ্রিম কোর্টেও একটি পৃথক আবেদন জানিয়েছে তারা।
ইলাহাবাদ হাই কোর্টে মসজিদ কমিটির তরফে দাবি জানানো হয়েছে, ১৯৯৩ সালের আগে জ্ঞানবাপী চত্বরের কোথাও পূজার্চনা বা আরতির কোনও প্রমাণ হিন্দুপক্ষ দিতে পারেনি। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা নামে পরিচিত) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন তারই প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে ‘অ্যাডভোকেট কমিশনার’-এর তত্ত্বাবধানে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। সেই রিপোর্ট জমাও পড়েছিল আদালতে। কিন্তু সে সংক্রান্ত নির্দেশ ঘোষণার আগেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বারাণসী জেলা আদালতে জ্ঞানবাপী মামলা স্থানান্তরিত হয়।
এর পরে জেলা আদালতের নির্দেশে এএসআই ভার পায় বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার। তারই ভিত্তিতে বুধবার ‘ব্যাস কা তহখানা’-য় আরতি ও পূজার অনুমতি দেন বিচারপতি বিশ্বেস। হিন্দু পক্ষের দাবি, ‘ব্যাস কা তহখানা’ দীর্ঘ দিন ধরে ‘ব্যাস’ পুরোহিত বংশের দখলে ছিল। তাঁরা এক সময় ওখানে বসবাসও করতেন। শৈলেন্দ্রকুমার পাঠক ব্যাস নামে ওই বংশের পুরোহিত আদালতে জানিয়েছেন, ১৯৯৩ সালের গোড়া পর্যন্ত তাঁরা ওখানে পুজো করেছেন।
কিন্তু ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের বিধানসভা ভোটে জিতে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মুলায়ম সিংহ যাদব তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তখন পুরোহিত ছিলেন সোমনাথ ব্যাস। শৈলেন্দ্র সোমনাথের উত্তরাধিকারী হিসাবে আবার পুজো করার অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। জেলাশাসককে ওই তহখানার রিসিভার হিসাবে নিয়োগ করার আবেদনও করেন। জ্ঞানবাপীতে পুজো করার অনুমতি চেয়ে স্থানীয় পাঁচ হিন্দু মহিলার তরফেও আদালতে পৃথক আর্জি জানানো হয়েছিল। সেই মামলার সূত্রেই জ্ঞানবাপীতে সমীক্ষা চালিয়েছিল এএসআই। তারই ভিত্তিতে আদালত আরতির অনুমোদন দেয়।