Srinagar

Srinagar: শ্রীনগরে নিহত চার, অভিযোগ ‘ভুয়ো সংঘর্ষের’

নিহতদের মধ্যে দু’জন ব্যবসায়ী। তাঁদের পরিবারের দাবি, এক জনকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে বাহিনী। অন্য জনকে হত্যা করা হয়েছে ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৬
শ্রীনগরে নিহত ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক মুদাসির গুলের শেষকৃত্যের জন্য তাঁর দেহ চেয়ে প্রতিবাদে শামিল পরিবার। মঙ্গলবার।

শ্রীনগরে নিহত ব্যবসায়ী ও চিকিৎসক মুদাসির গুলের শেষকৃত্যের জন্য তাঁর দেহ চেয়ে প্রতিবাদে শামিল পরিবার। মঙ্গলবার। ছবি পিটিআই।

কাশ্মীরে খাস শ্রীনগরের হায়দরপোরায় সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪ জনে। নিহতদের মধ্যে দু’জন ব্যবসায়ী। তাঁদের পরিবারের দাবি, এক জনকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে বাহিনী। অন্য জনকে হত্যা করা হয়েছে ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষে।

গত কাল সন্ধ্যায় হায়দরপোরায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বাহিনীর। আজ সকালে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আইজি বিজয় কুমার জানান, সংঘর্ষে চার জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি জঙ্গি হায়দর ও তার এক স্থানীয় সঙ্গী আমির মাগরে। মাগরে বানিহালের বাসিন্দা। তার পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। বিজয় কুমার জানান, নিহত বাকি দু’জনের নাম আলতাফ বাট ও মুদাসির গুল। তাঁদের মধ্যে আলতাফ ওই বাণিজ্যিক ভবনের মালিক। তাঁরও ওই ভবনে একটি অফিস ছিল। মুদাসির গুল দন্তচিকিৎসক ও ব্যবসায়ী। হায়দরপোরার ওই ভবনে তাঁর একটি কম্পিউটার সেন্টার ছিল। বিজয় কুমারের দাবি, মুদাসির গুল জঙ্গিদের সহযোগী। তিনিই হায়দর ও তার সঙ্গীকে আশ্রয় দিতে আলতাফের বাণিজ্যিক ভবনে একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছিলেন। উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে জঙ্গিদের যাতায়াতের ব্যবস্থাও করতেন।

Advertisement

বিজয়ের বক্তব্য, ‘‘গত রবিবার শ্রীনগরের জামলতা এলাকায় গুলিতে আহত হন এক কনস্টেবল। সেই ঘটনায় হায়দর জড়িত। মুদাসির হায়দরকে সেখান থেকে হায়দরপোরায় নিয়ে আসার কাজেও জড়িত থাকতে পারেন।’’ বিজয়ের দাবি, আলতাফ বাট দু’পক্ষের গুলি যুদ্ধের মধ্যে পড়ে নিহত হয়েছেন। তিনি জঙ্গিদের গুলি না বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তাঁর কথায়, ‘‘হায়দরপোরার ওই ডেরায় বসে জঙ্গিরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল। তাদের কাছ থেকে পিস্তল ও ম্যাগাজ়িন ছাড়াও কম্পিউটার ও মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। ডিআইজি স্তরের এক অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত একটি দল এই হাই-টেক জঙ্গি ডেরার নানা দিক নিয়ে তদন্ত করবে।’’ আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় নিহতদের দেহ এখনও পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি।

কিন্তু পুলিশের দাবি মানতে রাজি নন আলতাফ বাট ও মুদাসির গুলের পরিবারের সদস্যেরা। আলতাফের বড় মেয়ের বক্তব্য, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন আমার বাবাকে নিয়ে সংঘর্ষের সময়ে তিন বার ওই বাড়িতে ঢুকেছিল বাহিনী। দু’বার তাঁকে ফিরতে দেওয়া হয়। তৃতীয় বার তিনি নিহত হন।’’ আলতাফের পরিবারের দাবি, তাঁকে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করেছে বাহিনী। মুদাসির গুলের মার দাবি, ‘‘আমার ছেলে ডাক্তার। জঙ্গিদের সঙ্গে ওর যোগ ছিল না।’’ তাঁর বোনের বক্তব্য, ‘‘বেশির ভাগ সময়েই দিল্লিতে থাকত মুদাসির। গত কালই জম্মু হয়ে এখানে এসেছে। ওর সম্পর্কে পুলিশ যা বলছে তা সত্য নয়।’’ দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান আলতাফ ও মুদাসিরের পরিবারের সদস্যেরা।

বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন কাশ্মীরের রাজনীতিকেরাও। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির বক্তব্য, ‘‘নিরীহ নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পরে তাঁদের জঙ্গি সহযোগীর তকমা দেওয়া ভারত সরকারের নয়া কায়দা।’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লারও বক্তব্য, ‘‘এই সংঘর্ষ ও তাতে নিহত ব্যক্তিদের নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। অতীতে বহু বার ভুয়ো সংঘর্ষ হয়েছে। দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত করে এই সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement