(বাঁ দিক থেকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্রীয় বাজেটে এ বার বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে। বিরোধীরা একে ‘বিহার-অন্ধ্রের বাজেট’ বলেও কটাক্ষ করেছেন। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করার সময় এই দুই রাজ্যকে ‘বিশেষ’ উপহার দিলেন। বিহার এবং অন্ধ্রের জন্য রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নতুন বিমানবন্দর, মেডিক্যাল কলেজ তৈরির ক্ষেত্রে আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ করা হল এ বারের বাজেটে।
লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র সঙ্গে জুড়েছিল নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)। এ বারের সরকার গঠনেও এই দুই দলের বড় ভূমিকা ছিল। কারণ, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন একক ভাবে জিততে পারেনি বিজেপি। ফলে সরকার গড়তে শরিকদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে তাদের। সেখানেই জেডিইউ এবং টিডিপি, মূল ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়ায়। সরকার গড়তে নীতীশ এবং চন্দ্রবাবুকে পাশে পেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার বাজেটে সেই পাশে থাকার পুরস্কার দিলেন তিনি। বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য একাধিক ‘উপহার’ বরাদ্দ করা হল বাজেটে।
বিহার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য ‘বিশেষ’ মর্যাদাযুক্ত রাজ্যের তকমা আদায় করতে মরিয়া ছিলেন নীতীশ এবং চন্দ্রবাবু। পাশে থাকার জন্য মোদীকে কিছু বিশেষ শর্ত দিয়েছিলেন তাঁরা। রাজ্যের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি ছিল দু’জনেরই। এ বারের বাজেটে যেন তারই প্রতিফলন দেখা গেল। বিহারের জন্য যেমন নতুন বিমানবন্দর, সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে, মেডিক্যাল কলেজ, ক্রীড়া পরিকাঠামো তৈরি করতে বিশাল অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তেমনই চন্দ্রবাবুর স্বপ্নপূরণের জন্যও টাকা দেওয়ার কথা বলা হল এ বারের বাজেটে।
দীর্ঘ দিন ধরেই বিহারের অনগ্রসরতার কথা তুলে ধরে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে জেডিইউ। কিন্তু সেই দাবি মেনে বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া সম্ভব নয়, তা সোমবারই স্পষ্ট করেছিল মোদী সরকার। তা নিয়ে বিরোধীরা তো বটেই, জেডিইউয়ের মধ্যেও কটাক্ষের সুর বাজতে শুরু করেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার বাজেটে মোদী সরকার নীতীশকে নিরাশ করল না। বাংলার পড়শি রাজ্যের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে।
বিহারের সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে এ বারের বাজেটে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিহারের বেশ কয়েকটি এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। পটনা-পূর্ণিয়া, বক্সার-ভাগলপুরের ভিতর এক্সপ্রেসওয়ে উন্নয়ন করা হবে। এ ছাড়াও বুদ্ধগয়া, রাজগির, বৈশালী এবং দ্বারভাঙাতে এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই খাতে মোট ২৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।
এ ছাড়াও বিহারে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে বাজেটে। বক্সার জেলায় গঙ্গার উপর দুই লেন বিশিষ্ট সেতু তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, ভাগলপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘‘উন্নয়নের জন্য বেশি ঋণ নিতে পারবে বিহার সরকার।’’
এখানেই শেষ নয়, বিহারের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিশেষ ঘোষণা মোদী সরকারের। ভারতকে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে শীর্ষে তুলে ধরার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। সে কারণে যে সব প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে তার অধিকাংশ প্রকল্পই যেতে চলেছে বিহারে। নতুন করে সাজানো হবে বুদ্ধগয়া, রাজগির এবং নালন্দাকে। এ ছাড়াও, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ১১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর্থিক সহয়তার কথা বলা হয়েছে এই বাজেটে। পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোদী সরকার ‘পূর্বোদয়’ উদ্যোগ নিয়েছে। সেই উদ্যোগের অন্যতম অংশ হল বিহার।
বিহারের পর অন্ধ্রপ্রদেশ। এ বারের লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে অন্ধ্রের বিধানসভা নির্বাচনও হয়েছিল। সেই নির্বাচনে জগন্মোহনের দলকে হারিয়ে জয় পায় চন্দ্রবাবুর দল। আবারও মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ফেরেন চন্দ্রবাবু। ফিরেই অমরাবতীকে রাজ্যের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করেন তিনি। কিন্তু এই শহরের পরিকাঠামো তেমন উন্নত নয়। এ বারের বাজেটে চন্দ্রবাবুর সেই স্বপ্নই পূরণ করল কেন্দ্র। রাজধানী অমরাবতী গড়ে তোলা ও অন্যান্য পরিকাঠামোর জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ দুই রাজ্য হয়। তার পর অন্ধ্রপ্রদেশ পুনর্গঠন আইনের অধীনে হায়দরাবাদকে ১০ বছরের জন্য অন্ধ্রের রাজধানী হিসাবে বিবেচিত করার কথা বলা হয়েছিল। ২ জুন সেই মেয়াদ শেষ হয়। তার পরই চন্দ্রবাবু অমরাবতীকে রাজধানী করা হবে বলে ঘোষণা করেন। সেই রাজধানী এ বার সেজে উঠবে মোদীর হাত ধরে।