Ministry of Finance

টান পড়ছে রাজকোষে, বিনামূল্যে বাড়তি রেশন বিলির প্রকল্প বন্ধ করার সুপারিশ অর্থ মন্ত্রকের

বিজেপি ও অ-বিজেপি দল নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ অন্তত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:০০
‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-র মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করল অর্থ মন্ত্রক।

‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-র মেয়াদ আর না বাড়ানোর সুপারিশ করল অর্থ মন্ত্রক। ফাইল চিত্র।

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের রাজকোষে টান পড়েছে। জ্বালানির দাম বেড়েছে। সার ও অন্য খাতেও ভর্তুকি বেড়েছে। যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাজারে খাদ্যশস্যতেও টান পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকারের বিনামূল্যে বাড়তি রেশন বিলির ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’-র মেয়াদ আর না বাড়ানোর পক্ষে সুপারিশ করল অর্থ মন্ত্রক। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব জানালেও অর্থ মন্ত্রকের মত, এই প্রকল্পে এখানেই ইতি টানা হোক। একান্তই যদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হয়, তা বিনামূল্যে বিলি করা খাদ্যশস্যের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হোক। সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।

বিজেপি ও অ-বিজেপি দল নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মেয়াদ অন্তত আরও তিন মাস, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল। যাতে অন্তত উৎসবের মরসুমে গরিবদের জন্য বিনামূল্যে বাড়তি রেশন দেওয়া হয়। এই তিন মাসের মধ্যে গুজরাত, হিমাচল প্রদেশের ভোটও রয়েছে। কোভিড, লকডাউনের পরে চালু এই প্রকল্পে খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় থাকা ৮০ কোটি মানুষকে প্রতি মাসে মাথাপিছু অতিরিক্ত পাঁচ কিলোগ্রাম চাল বা গম দেওয়া হয়। খাদ্য সুরক্ষা আইনে কম দামে খাদ্যশস্যও বিলি করা হয়।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের তরফে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। খাদ্য ও গণবণ্টন সচিবের হিসেব অনুযায়ী, তিন মাসের জন্য বাড়তি রেশন দিতে অতিরিক্ত ৪৪,৭৬২ কোটি টাকা খরচ হবে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের ব্যয়বিভাগের তরফে সোমবার খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রককে জানানো হয়েছে, খাদ্যশস্যের বাজারদর ধরলে এর ৫০ শতাংশ বেশি খরচ হবে। ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে রাজকোষে টান, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, ভর্তুকির খরচ বেড়ে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, কোভিডের প্রকোপ অনেকটাই কমে গিয়েছে। ফলে যে সঙ্কটের কথা ভেবে এই সুরাহার কথা ভাবা হয়েছিল, তা আর নেই। তা ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রকল্প চালিয়ে গেলে এটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ধরে নেওয়া হবে। তখন এই প্রকল্প বন্ধ করাই কঠিন হবে। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বরই এই প্রকল্পে ইতি টানা উচিত। অর্থ মন্ত্রক আরও জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে এমনিতেই বিশ্ববাজারে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। বাড়তি রেশন বিলির প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার মতো যথেষ্ট খাদ্যশস্যও না থাকতে পারে। তাই প্রকল্প চালিয়ে গেলেও খাদ্যশস্যের পরিমাণ কমানো হোক।

সর্বভারতীয় রেশন দোকান ডিলারদের ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্বর বসু বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের কাছে এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করছি। কারণ কোভিডের ফলে গরিব, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত সকলেরই বেহাল দশা।’’ কিন্তু অর্থ মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাস, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে খাদ্য ভর্তুকিতে ইতিমধ্যেই ৮০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হয়েছে। অর্থ বছরের বাকি ছয় মাস, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্ন যোজনা চালাতে হলে আরও ৮৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। গত দু’বছরে প্রায় ২.৬০ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষায় এমনিতেই একটি পাঁচ সদস্যের পরিবার ২৫ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য ২ থেকে ৩ টাকা কিলোগ্রাম দরে পাচ্ছে। আরও ২৫ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা ভাবা দরকার। ধান-গমের ফলন কম হওয়ায় অন্ন যোজনার মেয়াদ বাড়ালে মজুত চাল-গমের পরিমাণ ন্যূনতম মজুতের বিপদসীমায় পৌঁছে যেতে পারে।

আরও পড়ুন
Advertisement