পঞ্জাব-হরিয়ানা শম্ভু সীমানায় কৃষকদের জমায়েত। ছবি: পিটিআই।
কৃষকদের বিক্ষোভে মঙ্গলবারের পর বুধবারও উত্তপ্ত থেকেছে পঞ্জাব এবং হরিয়ানার মধ্যবর্তী শম্ভু সীমানা। এই আবহে বিক্ষোভের তৃতীয় দিন কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে চলেছেন কৃষক নেতারা। সব কিছু পরিকল্পনামাফিক এগোলে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ চণ্ডীগড়ে কৃষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, অর্জুন মুন্ডা এবং নিত্যানন্দ রাইয়ের। বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা অবশ্য সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার পঞ্জাবে ‘রেল রোকো’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত পঞ্জাবের বিভিন্ন প্রান্তে রেল অবরোধ করবেন আন্দোলনকারী কৃষকেরা।
কৃষকদের ‘রেল রোকো’ কর্মসূচির জন্য উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় ট্রেন পরিষেবা বিপর্যস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা অন্যতম কৃষকনেতা সরওয়ান সিংহ পান্ধের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার কৃষকেরা নতুন করে কোনও সংঘাতের পথে হাঁটবেন না। কেন্দ্রের তরফে আলোচনায় বসার বার্তা পেয়েই তাঁরা বৈঠকে বসছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেন্দ্রের কাছে নিজেদের দাবিদাওয়ার কথা পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার থেকে ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করেছেন কৃষকেরা। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা— মূলত এই তিন রাজ্যের প্রায় সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। যা নিয়ে মঙ্গলবারের পর বুধবারও সারা দিন সরগরম ছিল পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের একাংশ। শেষ মুহূর্তে প্রতিবাদী কৃষকদের বুঝিয়ে আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্র। সোমবার মধ্যরাতে চণ্ডীগড়ে কৃষকদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা এবং কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টার বৈঠকের শেষেও কোনও রফাসূত্র মেলেনি।
মঙ্গলবার সকালে কয়েকশো ট্র্যাক্টর নিয়ে শম্ভু সীমানায় জমায়েত শুরু করেন কৃষকেরা। উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় নতুন করে। দিল্লি-সোনিপত লাগোয়া সিঙ্ঘু এবং দিল্লি-বাহাদুরগড় লাগোয়া টিকরি সীমানায় যানবাহন চলাচল অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে আবার কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। তা থেকে বাঁচতে মূলতানি মাটি মাখেন কৃষকেরা। কৃষকদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের ‘ভারত বন্ধ’ পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত।
কৃষক আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছে কৃষকদের দু’টি বড় সংগঠন সংযুক্ত কিসান মোর্চা এবং কিসান মজদুর মোর্চা। গত ডিসেম্বরেই তারা দাবি আদায়ের জন্য ‘দিল্লি চলো’ অভিযানের ডাক দেয়। দু’টি সংগঠনের আওতায় মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের সাড়ে তিনশোটি ছোট-বড় কৃষক সংগঠন রয়েছে। আন্দোলনে নামা কৃষকদের দাবি ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকে। একই সঙ্গে সমস্ত কৃষিঋণ মকুব করতে হবে। স্বামীনাথন কমিশনের প্রস্তাব মেনে ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। ২০২০-২১ সালের প্রতিবাদে কৃষকদের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।