কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ট্র্যাক্টর মিছিল করে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েছেন লালকেল্লায়। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: রয়টার্স।
এক বছরের মাথায় ফের অশান্তির সাক্ষী রাজধানী। প্রশ্ন উঠল দিল্লি পুলিশের দক্ষতা নিয়ে। ঠিক এক বছর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল পুলিশ। আজ রাজধানীর রাজপথ ধরে দাপিয়ে বেড়াল বিক্ষোভকারীদের ট্র্যাক্টর। এমনকি দুপুরের পর থেকে বিক্ষোভকারীরা দখল নেয় লালকেল্লার। সেখানে তোলা হয় ধর্মীয় সংগঠনের পতাকা। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রের অধীনে হওয়ায় প্রশ্নের মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকা। রাতে দিল্লি পুলিশের উপর ভরসা না রেখে উপদ্রুত এলাকাগুলিতে ১৫ কোম্পানি আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। একাধিক স্থানে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও।
এমন নয় যে, দিল্লি পুলিশের কাছে আজকের অশান্তি নিয়ে কোনও গোয়েন্দা তথ্য ছিল না। গত কালই স্পেশাল পুলিশ কমিশনার (ইনটেলিজেন্স) দীপেন্দ্র পাঠক জানিয়েছিলেন, ট্র্যাক্টর মিছিলে বড় মাপের গণ্ডগোল বাধাতে তৎপর খলিস্তানি শক্তি। যাদের পিছন থেকে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, সব জানা সত্ত্বেও কেন তা হলে মিছিলের অনুমতি দিল প্রশাসন! কৃষকদের দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি না দিলেই আজ রাজধানীতে আমেরিকার ক্যাপিটল হিল দখলের মতো পরিস্থিতি তৈরি হত না। আর অনুমতি যখন দেওয়াই হল, তখন কৃষকেরা যাতে রুট মেনে মিছিল করেন, তা নিশ্চিত করতে কেন ব্যর্থ হল পুলিশ! যে আধাসামরিক বাহিনী আজ রাতে মোতায়েন করা হয়েছে, তাদের কেন গত কাল থেকেই স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন করা হল না, সে প্রশ্নও উঠেছে।
দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। ফলে আজকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে দিল্লি পুলিশের ব্যর্থতা প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র সচিবের ভূমিকা নিয়েই। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের কথায়, “দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রের। কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আপ নেতৃত্বের অভিযোগ, গোটা দেশ দূরে থাক, নাকের ডগায় থাকা দিল্লি সামলাতে হিমশিম অবস্থা মোদী-শাহ জুটির। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অযোগ্যতা নিয়ে সরব হয়ে প্রাক্তন আমলা কান্নন গোপীনাথন প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে টুইটে বলেন, “প্রথমত দেশের জনতাকে বোকা বানানো বন্ধ করে তাদের কথা একবার শুনুন। দ্বিতীয়ত অযোগ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বরখাস্ত করুন। আর যদি আপনার সে সাহস না থাকে, তাহলে অমিত শাহকে মন্ত্রক না দিয়ে কেবল উপ-প্রধানমন্ত্রী করে রেখে দিন।”
এক দিকে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি জল্পনা শুরু হয়েছে, জেনেশুনেই কি আজ দিল্লিতে কৃষকদের তাণ্ডব চালাতে দিয়েছে পুলিশ? রাজধানী জুড়ে গোলমাল থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে বিক্ষোভকারীদের উপরে কৃষক নেতাদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। দুপুরের পর কৃষকদের ধর্নাস্থলে ফিরে আসার জন্য নেতারা আহ্বান জানালেও ততক্ষণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। বিজেপি মুখপাত্র মহসিন রাজার প্রশ্ন, আজকের ঘটনা থেকে স্পষ্ট, বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার হারিয়েছেন যোগেন্দ্র যাদব, রাকেশ টিকায়েতরা।