কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় গরহাজির থাকবে বিরোধীরা। ছবি: পিটিআই।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ চারটি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটের আগে আগামিকাল শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। প্রথম দিনের রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মোট ১৮টি বিরোধী দল আজ বার্তা দিল, কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে আগাগোড়া চড়া সুরেই বাঁধা থাকবে এ বারের সংসদ।
আজ কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, শিবসেনা-সহ ১৬টি বিরোধী রাজনৈতিক দল যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, যে ভাবে সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে তিনটি কৃষি বিল পাশ করানো হয়েছে, তা সংবিধান-বিরোধী এবং এর ফলে রাজ্যগুলির অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের বক্তৃতায় উপস্থিত থাকবে না তারা। অকালি দল এবং আম আদমি পার্টিও পৃথক ভাবে একই রাস্তায় হাঁটবে বলে জানিয়েছে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তালিকায় নেই মায়াবতীর বিএসপি। বিজেডি, ওয়াইএসআর ও টিআরএস সেন্ট্রাল হলে উপস্থিত থাকবে বলেই সূত্রের খবর। শিরোমণি অকালি দল এবং আম আদমি পার্টি ১৬ দলের তালিকায় না থেকেও পৃথক ভাবে জানিয়েছে, তারা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় গরহাজির থাকবে। অকালির পক্ষ থেকে এক কদম এগিয়ে বলা হয়েছে, তারা কোনও বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করছে না। করছে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর ভর করে। অকালি সূত্রের বক্তব্য, কৃষি বিলের প্রতিবাদ সর্বপ্রথম তারাই করেছিল। দলের সাংসদ নরেশ গুজরাল বলেন, “কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলাম আমরা।’’
আজ যে ১৬টি দলের (কংগ্রেস, এনসিপি, তৃণমূল, ডিএমকে, এসপি, এনসি, আরজেডি, শিবসেনা, বাম, মুসলিম লিগ, পিডিপি, এমডিএমকে ইত্যাদি) যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘‘এই তিনটি কৃষি আইন যদি প্রত্যাহার না করা হয়, তা হলে এগুলি জাতীয় খাদ্য সুরক্ষার ভিত নষ্ট করে দেবে। যে সুরক্ষার কেন্দ্রে রয়েছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, গণবণ্টন ব্যবস্থা এবং সরকারের তরফ থেকে ফসল কেনা। এই কৃষি আইন আনা হয়েছে রাজ্য সরকার, কৃষি ইউনিয়নের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে। সংসদীয় গণতন্ত্র, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরে বিল পাশ করানো হয়েছে। এই আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েই তাই যথেষ্ট প্রশ্নের অবকাশ রয়েছে।’’
এর পর সুর আরও চড়িয়ে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি সরকার উদ্ধত, একগুঁয়ে এবং অগণতান্ত্রিক ভাবে চলছেন। সরকারের সংবেদনশীলতার বিপুল ঘাটতি দেখে আমরা স্তম্ভিত। এই কৃষিবিরোধী আইন প্রত্যাহারের জন্য সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল একসঙ্গে দাবি জানাচ্ছি। ভারতীয় কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা শুক্রবার রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ বিভিন্ন বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কথা বলে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা বয়কট করার বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি করেছেন। গুলাম নবিই কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, যদিও সংসদের দু’টি সভাতেই এ বার তাদের উপস্থিতি কম থাকবে (পশ্চিমবঙ্গে ভোট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন সাংসদেরা), কিন্তু বিজেপি-বিরোধী কক্ষ সমন্বয় করা হবে মসৃণ ভাবেই। তাতে ঘাটতি থাকবে না।
কৃষি বিল নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পাশাপাশি চিন প্রসঙ্গেও সরব হওয়ার কৌশল নিয়েছেন বিরোধীরা। আগামিকাল স্পিকারের ডাকা লোকসভার সাংসদদের বৈঠক। পরের দিন প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় বৈঠক এবং তার পর রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর সঙ্গে বৈঠক ওই সভার সাংসদদের। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, এই তিনটি বৈঠকের কোনওটিতেই উপস্থিত থাকতে আগ্রহী নয় দল। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের কথায়, “আমরা কি কাঠের পুতুল! মোদী অমিত শাহ যে ভাবে নাচাবেন সে ভাবে নাচার জন্য সংসদে হাজির হব? আমাদের উপস্থিতি এবং প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও তো কৃষি বিল পাশ করিয়ে নেওয়া হল।’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “পুঁজিপতিরা সব সময়ই শস্য মজুত করে নিজেদের মুনাফা লোটার পক্ষে। সেই সঙ্গে তারা চায় জমি-সহ গোটা কৃষি সম্পদ লুঠ করতে। ফলে রাষ্ট্রপতির জন্য সাউথ ব্লকের বাবুদের তৈরি করে দেওয়া অমৃতবাণী শুনে লাভটা কী হবে?”
সংসদ বিষয়কমন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বিরোধী দলগুলির কাছে আবেদন জানান, রাষ্ট্রপতির বক্তৃতায় হাজির থাকার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে। তাঁর বক্তব্য, ৩০ তারিখ প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে সব দল হাজির থাকবে বলেই আশা করছে সরকার।