Coromandel Express Accident

একের দেহ তুলে দেওয়া হচ্ছে অন্যের হাতে! মর্গের ভুলে অন্তহীন অপেক্ষায় মৃতের পরিজনেরা

অনেকেই দাবি করছেন, তাঁদের প্রিয়জনেদের দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে অন্য কারও হাতে। এই ভুল রুখতে এমস কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশ মেনে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
ভুবনেশ্বর শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৯:০৭
File image of Morgue

— প্রতীকী ছবি।

এ যেন শেষ হয়েও শেষ না হওয়ার কাহিনি। কাহিনি বটে, তবে কঠোর সত্য। বালেশ্বরে রেল দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারে এখন শোকের ছায়া। কিন্তু গোরাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা এখনও সেই শোকের সুযোগটুকুও পাননি। কারণ, দুর্ঘটনার পর পাঁচ দিন পেরোতে চললেও এখনও প্রিয়জনের দেহটি হাতে পাননি তাঁরা। গোরাচাঁদ ট্রেন দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন ছেলেকে। দেহ পাওয়ার আশায় বাবা এখনও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ভুবনেশ্বর এমসের মর্গের সামনে।

অনেকেই দাবি করছেন, তাঁদের প্রিয়জনেদের দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে অন্য কারও হাতে। এই অবস্থায় দিশাহারা পরিজনেরা কী করবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। এনডিটিভি সূত্রে দাবি, এই ভুল রুখতে এমস কর্তৃপক্ষ সরকারি নির্দেশ মেনে ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছেন। কিন্তু তাতেও তো লাগছে অনেকটা সময়!

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা গোরাচাঁদ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছেলে শুভাশিসের দেহ নিতে এসেছেন। সোমবার থেকে এমসের মর্গের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ। কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানিয়েছেন, ডিএনএ পরীক্ষার ফল মিললেই দেহ ছাড়া হবে। এখন শূন্য দৃষ্টিতে সে দিকেই তাকিয়ে পুত্রশোকে ভগ্ন বৃদ্ধ।

মর্গের সামনেই দাঁড়িয়ে শেখ আব্দুল গনি। দুর্ঘটনায় বড় ছেলেকে হারিয়েছেন। ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ভুবনেশ্বর এসেছেন দেহ নিতে। শেখ আব্দুল বলছেন, ‘‘ওরা বলছেন, বিহারের কেউ আমার ছেলের দেহ নিয়ে চলে গিয়েছেন! আমি ছেলের দেহ পাচ্ছি না।’’ একই অবস্থা জ়াকারিয়া লস্করেরও। কাকা আবু বকর লস্করের দেহ নিতে ভুবনেশ্বর এসেছেন। কিন্তু এসে শুনছেন, মালদহের এক মহিলা এসে তাঁর কাকার দেহ নিয়ে নাকি চলে গিয়েছেন। জ়াকারিয়া বলছেন, ‘‘ওরা বলছেন, মালদহ থেকে এক মহিলা এসে নাকি আমার কাকার দেহ নিজের স্বামীর বলে দাবি করে নিয়ে চলে গিয়েছেন। আমি মহিলার নামও জানি না। ওরা শুধু বলছেন, এক মহিলা নিয়ে চলে গিয়েছেন। এ বার আমি কী করব!’’

ট্রেন দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণ বেঁচেছে, কিন্তু হারিয়েছেন ১৬ বছরের সন্তানকে। পুত্রশোকে কাতর মা মীরা দেবী ছেলের দেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন চার দিকে। তিনি বলছেন, ‘‘ওরা জানালেন, কেউ এসে আমার ছেলের দেহ নিয়ে চলে গিয়েছেন।’’

কেউ হারিয়েছেন ছেলেকে, আবার কেউ কাকার সন্ধানে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মর্গের চারপাশে। এ ভাবে একের দেহ অন্যের হাতে তুলে দেওয়া ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সময় লাগছে আরও বেশি। সব হারানোর বেদনা চেপে মর্গের সামনে স্বজনহারাদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে চেন্নাইমুখী করমণ্ডল এক্সপ্রেস, হাওড়াগামী বেঙ্গালুরু সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। তার পর সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে নিহত এবং আহতের সংখ্যা। মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৮৮ জনের।

আরও পড়ুন
Advertisement