দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে দুই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রাজীব কুমার (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে রাজীব জানিয়েছেন, ভোটের পাঁচ-ছয় মাস আগে ইভিএম খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। প্রত্যেক ধাপে রাজনৈতিক দল বা তাদের এজেন্টরা উপস্থিত থাকেন। নতুন ব্যাটারি ভরার পর ইভিএম সিল করা হয়। তাতে সই করেন এজেন্টরা। ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় রাখা হয় ইভিএম। ইভিএমের ব্যাটারি একবারই ব্যবহার করা যায়। পাঁচ থেকে ছয় দিন চলে ব্যাটারি।
ভোটপূর্ব সমীক্ষার সঙ্গে ফল মিলছে না কেন? সাংবাদিকেরা এই প্রশ্ন করেন রাজীবকে। তিনি বলেন, যাঁরা সমীক্ষা করছেন, তাঁদের আত্মসমীক্ষা করার প্রয়োজন। সমীক্ষার জন্য যে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। বার বার সমীক্ষার ফলের সঙ্গে ভোটের আসল ফল না মিললে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা দরকার।
উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন রাজীব। ১৩ এবং ২০ নভেম্বর দেশের ৪৮টি বিধানসভা কেন্দ্র এবং দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে রয়েছে উপনির্বাচন। ১৩ নভেম্বর দেশের ৪৭টি বিধানসভা কেন্দ্র এবং কেরলের একটি লোকসভা কেন্দ্রে হবে উপনির্বাচন। ওই দিনেই পশ্চিমবঙ্গের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্রেও হবে উপনির্বাচন। ২০ নভেম্বর উত্তরাখণ্ডের একটি বিধানসভা এবং মহারাষ্ট্রের একটি লোকসভা আসনে হবে উপনির্বাচন। ফলাফল ঘোষণা হবে ২৩ নভেম্বর। পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করেনি কমিশন।
ঝাড়খণ্ডে দুই দফায় হবে ভোট। ১৩ এবং ২০ নভেম্বর ভোটগ্রহণ হবে সেখানে। ২৩ নভেম্বর গণনা। প্রথম দফায় ভোট হবে ৪৩টি বিধানসভা কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্রের প্রার্থীরা ১৮ অক্টোবর থেকে মনোনয়ন জমা করা শুরু করতে পারবেন। শেষ হবে ২৫ অক্টোবর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৩০ অক্টোবর। দ্বিতীয় দফায়, ২০ নভেম্বর ঝাড়খণ্ডের ৩৮টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ। ওই কেন্দ্রের প্রার্থীরা ২২ অক্টোবর থেকে মনোনয়ন জমা শুরু করতে পারবেন। ২৯ অক্টোবর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ নভেম্বর।
মহারাষ্ট্রের ২৮৮টি বিধানসভা আসনে এক দিনেই ভোট। ২০ নভেম্বর হবে ভোটগ্রহণ। ২৩ তারিখ গণনা হবে। ২২ অক্টোবর শুরু হবে মনোনয়ন জমা। মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন ২৯ অক্টোবর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ৪ নভেম্বর।
রাজীব জানালেন, নির্বাচন উৎসব। এতে সকল নাগরিককে শামিল হওয়ার ডাক দিলেন তিনি। প্রচারের সময় আইন যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সে দিকেও নজর থাকবে।
রাজীবের দাবি, দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে অবাধ এবং স্বচ্ছ। এই নিয়ে কর্মী, আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পানীয়, নগদ বিলির উপর কড়া নজর রাখা হবে। সীমানায় চলবে কড়া নজরদারি। তবে সাধারণ মানুষের যাতে সমস্যা না হয়, তা দেখা হবে।
দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময় সব বুথে চলবে ভিডিয়োগ্রাফি। ‘সিভিজিল’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জমা করার সুযোগ থাকবে।
ঝাড়খণ্ডে মোট বিধানসভা আসন ৮১। মোট ভোটারের সংখ্যা ২.৬ কোটি। তার মধ্যে ৬৬.৪ শতাংশ তরুণ। গ্রামে বুথের সংখ্যাই বেশি। বুথপ্রতি গড়ে ভোটার ৮০০-র বেশি।
মহারাষ্ট্রে মোট বিধানসভা আসন ২৮৮টি। রাজ্যে বুথের সংখ্যা ১,০০,১৮৬। ওই রাজ্যে মহিলা চালিত বিশেষ বুথ হবে। সেই সংখ্যা ৩৮৮। শহরে বুথের সংখ্যা ৪২,৬০৪। গ্রামে বুথের সংখ্যা ৫৭,৫৮২। রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯.৬৩ কোটি। ২০ লক্ষ ৯৩ হাজার জন প্রথম বার ভোট দেবেন। ৯৬০ জন ভোটারপিছু একটি করে বুথ বরাদ্দ হয়েছে।
রাজীবের মুখে গানের কলি। তিনি জানালেন, দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। তার পরেও ‘কুছ তো লোগ কহেঙ্গে’।
জম্মু ও কাশ্মীরের ভোটে ১৩০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে। হরিয়ানায় ৭৫ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে। রাজীব জানিয়েছেন, দুই বিধানসভা নির্বাচনে কোনও হিংসা হয়নি। কোনও গুলি চলেনি।
হরিয়ানার, জম্মু ও কাশ্মীরের ভোটারদের ধন্যবাদ জানালেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রাজীব কুমার। তিনি জানালেন, মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের ভোট উৎসবে শামিল হয়েছেন।
মেদিনীপুরের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন জুন মালিয়া। তিনি লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। তালড্যাংরার বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে সংসদে গিয়েছেন। মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। আর সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফল অনুযায়ী, এই ছ’টি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিই ছিল তৃণমূলের দখলে। কেবল মাদারিহাট কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। গত জুলাই মাসে রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। চারটি আসনই গিয়েছিল তৃণমূলের ঝুলিতে।
দুই রাজ্যের নির্বাচনের সঙ্গে বাংলার ছ’টি বিধানসভা ও একটি লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয় কি না, তা-ও দেখার। লোকসভা ভোটের পর থেকে বিধায়কশূন্য রয়েছে রাজ্যের ছ’টি বিধানসভা কেন্দ্র। নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর, তালড্যাংরা, মাদারিহাট এবং সিতাইয়ে এখন বিধায়ক নেই। নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক ছিলেন তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক। তিনি ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছেন। হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলাম পরে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। গত মাসে হাজি নুরুলের মৃত্যু হয়েছে। সে কারণে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে এখন কোনও সাংসদ নেই।
চলতি বছরের শেষে মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টের সময় দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে ওই দুই রাজ্যের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করছেন দেশের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক রাজীব কুমার এবং অন্য দুই নির্বাচনী আধিকারিকও।