মণিপুর হিংসার প্রতিবাদে মিজোরামে বিক্ষোভ। ছবি: পিটিআই।
মণিপুরের জনজাতিদের উপর হামলার প্রতিবাদ এ বার মিজোরামে। মঙ্গলবার মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা এবং উপমুখ্যমন্ত্রী তানলুইয়া-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ সে রাজ্যের রাজধানী আইজল-সহ কয়েকটি এলাকায় মণিপুর হিংসার প্রতিবাদে সমাবেশ করলেন। বিজেপি শাসিত মণিপুরে সংখ্যাগুরু মেইতেইরা জনজাতি কুকি এবং জ়ো সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ তুললেন তাঁরা। ‘সেন্ট্রাল ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন (সিওয়াইএমএ), মিজো জিরলাই পাওল (এমজেডপি)-সহ পাঁচটি মিজো নাগরিক গোষ্ঠীর তরফে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
মণিপুরের জো জনজাতিরা আদতে মিজো জনগোষ্ঠীর অংশ। অভিযোগ, গত ৩ মে থেকে মণিপুরে ধারাবাহিক হিংসার শিকার হয়েছে তাঁরা। কয়েক হাজার জো জনজাতির নাগরিক মণিপুর থেকে মিজোরামেও আশ্রয় নিয়েছেন। চলতি বছরের নভেম্বরে মিজোরামে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। সে রাজ্যের শাসকদল ‘মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (এমএনএফ) বিজেপির নেতৃত্বধীন ‘নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স’ (নেডা)-এর অন্যতম শরিক দল। কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব গঠনের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ওই জোট তৈরি করেছিল বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা-সহ এমএনএফ শীর্ষ নেতাদের মণিপুর নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে বিজেপির উপর চাপ বাড়ল বলেই মনে করা হচ্ছে। চলতি বছরের শেষেই রাজস্থান, তেলঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের সঙ্গে মিজোরামেও বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা।
মণিপুরে দুই জনজাতির মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো এবং গণধর্ষণের ঘটনার ভিডিয়ো (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) ভাইরাল হওয়ার পরে তার প্রভাব পড়েছে মিজোরামেও। পিস অ্যাকর্ড মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (পামরা) নামে আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের সংগঠনের হুঁশিয়ারির জেরে ইতিমধ্যেই মিজোরাম ছেড়েছেন কয়েক হাজার মেইতেই। মণিপুরের আশ্রয় শিবিরে রয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে মিজোরামের স্বরাষ্ট্র সচিব এইচ লালেংমাওয়াইয়া সে রাজ্যের মেইতেই সংগঠন ‘অল মিজোরাম মণিপুরি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পর সরকারি বিবৃতিতে মেইতেইদের জন্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথা বলা হয়। কিন্তু আতঙ্কিত মেইতেইরা এখনও মিজোরামে ফেরেননি।
গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।
মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ সিংহকে। তাঁর অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডার-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ১ মাস কেটে গেলেও হিংসা থামেনি।