CPM On INDIA

‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে যোগ দেবে না সিপিএম! অভিষেকদের কমিটিকেই ‘চ্যালেঞ্জ’ পলিটব্যুরোর

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কোনও ভাবেই চায় না, তৃণমূলের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করুন সীতারাম ইয়েচুরি। অন্য দিকে, কেরল সিপিএমও চায় না কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মাখামাখি’ করুক দল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৩৫
CPM On INDIA

সীতারাম ইয়েচুরি। —ফাইল চিত্র।

বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে যে সিপিএম ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ লাইনে হাঁটতে চলেছে তা আনন্দবাজার অনলাইন আগেই লিখেছিল। হলও তা-ই। রবিবার দু’দিনের পলিটব্যুরোর বৈঠক শেষে সিপিএম জানিয়ে দিল, তারা ‘ইন্ডিয়া’য় আছে। তবে জোটের সমন্বয় কমিটিতে নেই। থাকবেও না। কমিটির ১৪ নম্বর জায়গাটি ফাঁকা ছিল সিপিএমের জন্য। পরে নাম জানানো হবে বলে পার্টির তরফে জানানোও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে এক কমিটিতে না-যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম পলিটব্যুরো। শুধু তা-ই নয়, সিপিএম এখন বলছে, ‘ইন্ডিয়া’য় এমন কোনও ‘সাংগঠনিক কাঠামো’ থাকা উচিত নয় যা বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। কার্যত এই কমিটির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল সিপিএম।

Advertisement

সিপিএমের পলিটব্যুরো দু’দিনের বৈঠকের শেষে রবিবার ‘ইন্ডিয়া’ সংক্রান্ত কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছে। এক, তারা চায় এই জোট আরও শক্তিশালী হোক। দুই, বিজেপিকে কেন্দ্রের সরকার থেকে সরানো নিশ্চিত করার লড়াইয়ে তারা থাকবে। তিন, দেশ জুড়ে ‘ইন্ডিয়া’র সমাবেশ করে মানুষকে বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন বলে দল মনে করছে। কিন্তু এই সব কিছুকেই ঢেকে দিয়েছে একটি বাক্য— ‘‘এমন কোনও সাংগঠনিক কাঠামো থাকা উচিত নয় যা বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।’’

একে গোপালন ভবন সমন্বয় কমিটি শব্দটির উল্লেখ করেনি। তবে দলের এক বাঙালি পলিটব্যুরোর সদস্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘সাংগঠনিক কাঠামো বলতে সমন্বয় কমিটির কথাই বলা হয়েছে।’’ পলিটব্যুরো বৈঠকের আগে দলের মধ্যে দোলাচল ছিল কমিটিতে নাম দেওয়া, না-দেওয়ার বিষয় নিয়ে। একটি অংশের বক্তব্য ছিল, অপরিচিত কোনও নেতাকে সেখানে পাঠাতে পারে পার্টি। তবে একটা বড় অংশের বক্তব্য ছিল, ‘ইন্ডিয়া’র বেঙ্গালুরু ও মুম্বই বৈঠকের মাঝে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়ে গিয়েছিল সমন্বয় কমিটি জাতীয় কিছুতে দলের কেউ থাকবে না। ফলে কেন্দ্রীয় কমিটির সেই সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে পলিটব্যুরো ভিন্ন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

‘ইন্ডিয়া’র মুম্বই বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছিলেন, ‘‘সমন্বয় কমিটি ১৪ জনের হবে। ১৩ জনের নাম স্থির হয়ে গিয়েছে। ১৪ নম্বর জায়গাটি সিপিএমের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলে‌ছেন, পরে তাঁরা নাম দেবেন।’’ মুম্বইয়ের বৈঠক হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর। সমন্বয় কমিটিও গঠিত হয়েছিল সেই দিনই। নাম জানায়নি সিপিএম। সমন্বয় কমিটিতে না-থাকলেও প্রচার, গবেষণা, সমাজমাধ্যম সংক্রান্ত ‘ইন্ডিয়া’র যে ‘সাব কমিটি’গুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে সিপিএমের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

আলিমুদ্দিন স্ট্রিট কোনও ভাবেই চায় না, তৃণমূলের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগির ছবি সামনে আসুক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইয়েচুরির ছবি নিয়ে ক্ষুব্ধ নিচুতলার কর্মীরা। তাঁদের বোঝানোর জন্য রাজ্য সিপিএম বিশেষ কর্মসূচি হিসাবে ‘পাঠচক্র’ অনুষ্ঠিত করেছিল শাখায় শাখায়। যেখানে বিবিধ প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয়েছিল নেতাদের। ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটিতে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে অভিষেক থাকায়, সেখানে গেলে নতুন করে ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বাংলার নেতাদের। অন্য দিকে কেরল সিপিএমও চায় না কংগ্রেসের সঙ্গে ‘মাখামাখি’ করুক দল। ফলে সাঁড়াশি চাপে পড়তে হয় সিপিএম পলিটব্যুরোকে।

‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটি আসন সমঝোতা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গত বুধবারের প্রথম বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা করেছে। সিপিএম আবার কেন্দ্রীয় ভাবে আসন বোঝাপড়ার বিরুদ্ধে। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি একাধিক বার বলেছেন, আসন সমঝোতা কেন্দ্রীয় ভাবে হতে পারে না। তা হবে রাজ্য ভিত্তিক। যে রাজ্যে বাস্তবতা যেমন, সেই রাজ্যে তেমন। এই ‘বাস্তবতা’র উপর দাঁড়িয়েই সিপিএম পলিটব্যুরো মনে করছে, সাংগঠনিক কাঠামো জাতীয় কোনও কিছুতে থাকাটা তাদের পক্ষে আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়।

আরও পড়ুন
Advertisement