(বাঁ দিকে) সিপিএম নেতা মানিক সরকার। তিপ্রা মথা প্রধান প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মন (ডান দিকে)। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
মঙ্গলবার দেশের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ। ৮ সেপ্টেম্বর গণনা। পশ্চিমবঙ্গের ধূপগুড়িও রয়েছে উপনির্বাচনের তালিকায়। সেই সঙ্গে রয়েছে ত্রিপুরার দু’টি আসনে জোড়া উপনির্বাচন — ধনপুর ও বক্সনগর। সূত্রের খবর, ভোটঘোষণার আগে থেকেই নতুন সমীকরণ তৈরিতে মরিয়া ছিল ত্রিপুরা সিপিএম। কংগ্রেস তো বটেই, ত্রিপুরা সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রদ্যোৎ কিশোর দেব বর্মনের তিপ্রা মথার সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছেন। তবে শাসকদল বিজেপি এই জল্পনায় গুরুত্ব দিচ্ছে না। গেরুয়া শিবিরের বক্তব্য, সাংগঠনিক শক্তির জোরেই বিজেপি দু’টি আসনেই জিতবে।
ধনপুর থেকে বিধানসভা ভোটে লড়েছিলেন বিজেপির প্রতিমা ভৌমিক। প্রতিমা এখন লোকসভার সাংসদ তথা কেন্দ্রের মন্ত্রী। জিতলেও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে সাংসদ পদ রেখে দেন গেরুয়া শিবিরের এই নেত্রী। সেই কারণেই ধনপুরে উপনির্বাচন হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ধনপুর দখল করা ছিল বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার ওই কেন্দ্র থেকেই জিততেন। ২০১৮ সালে প্রতিমাকে হারিয়ে জিতেছিলেন মানিক। সে বার সরকার বদল হওয়ার পর মানিককে বিরোধী দলনেতা করেছিল সিপিএম। গত ভোটে অবশ্য মানিক লড়েননি। দলের অনুরোধ সত্ত্বেও ভোট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন বর্ষীয়ান নেতা।
সিপিএমের মানিক সরতেই ধনপুর জিতে নেয় বিজেপি। খানিকটা পশ্চিমবঙ্গের সাতগাছিয়ার মতোই। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কেন্দ্র ছিল সাতগাছিয়া। ২০০১ সালে বসু ভোট থেকে সরে দাঁড়াবার পর অদ্যাবধি সেই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে। বাংলায় তৃণমূলের (এখন বিজেপি) সোনালি গুহ যেটা সাতগাছিয়ায় করেছিলেন, ত্রিপুরায় সেটিই করেছেন প্রতিমা। বক্সনগর কেন্দ্রটি গত ভোটে ছিল সিপিএমের দখলে। সেখানকার বিধায়ক সামসুল হকের মৃত্যুর কারণে ওই বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ত্রিপুরায় বিধানসভা ভোট হয়েছিল। সেখানে বাংলা মডেলেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছিল সিপিএম। তবে চেষ্টা করেও মথার সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া হয়নি। ফলঘোষণার পর সাদা চোখে দেখা গিয়েছিল, মথার ভোট কাটাকাটির জন্য অন্তত ১৯টি আসন হারাতে হয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে। সেই সময়ে ত্রিপুরা সিপিএমের নেতারা প্রকাশ্যেই বলতেন, মুখে বড় বড় কথা বললেও বিজেপির ‘দালাল’ হিসাবে কাজ করেছে মথা। কিন্তু পাঁচ মাসের মধ্যেই সেই মথাকে সঙ্গে পেতে মরিয়া তারা। সিপিএম সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুরেই প্রদ্যোতের সঙ্গে ফোনে একপ্রস্ত কথা হয়েছে দলের ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরির। সোমবার সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে ত্রিপুরার পর্যবেক্ষক অজয় কুমারের সঙ্গেও কথা হয়েছে জিতেন্দ্রর। যদিও কোনওটাই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করেনি সিপিএম।
৬০ আসনের ত্রিপুরা বিধানসভায় বিজেপি-আইপিএফটি জোট জিতেছিল ৩২টি আসনে। মথা একক ভাবে পায় ১৩টি আসন। সিপিএম-কংগ্রেস জোট পায় ১৪টি আসন (সিপিএম ১১টি, কংগ্রেস তিনটি)। এখন প্রশ্ন হল, মথার সঙ্গে কি বোঝাপড়া হবে? হলে সিপিএমের লাভ কী? অনেকের ব্যাখ্যা, মথা প্রার্থী না দিলে জনজাতি ভোট বামেদের দিকে গেলে ধনপুরের সমীকরণ বদলে যেতে পারে। সরকারের উপর চাপ বাড়াতে তাতে সুবিধা হবে। আবার বক্সনগরে সংখ্যালঘু ভোট বড় ফ্যাক্টর। কিছু জনজাতি ভোটও রয়েছে। সেখানেও মথাকে পাশে পেতে চাইছে দশরথ দেব স্মৃতি ভবন (সিপিএমের ত্রিপুরা রাজ্য দফতর)।
ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র সুব্রত চক্রবর্তী অবশ্য মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ওরা জোট করলেও আমাদের কিছু এসে-যায় না। আমরা আমাদের সংগঠনের জোরেই জিতব। দু’টি আসনেই জিতব।’’ কিন্তু ত্রিপুরার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকের বক্তব্য, বর্তমানে ত্রিপুরা বিজেপি গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ। সেই দ্বন্দ্ব এমন জায়গায় গিয়েছে যে, ত্রিপুরা ক্রিকেট সংস্থার দখল কেন্দ্র করে আগ্নেয়াস্ত্র পর্যন্ত বেরিয়ে পড়েছিল! এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহার গোষ্ঠী। অন্য দিকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমার গোষ্ঠী। শেষ পর্যন্ত ত্রিপুরায় কী সমীকরণ দাঁড়ায় এবং মথা কী করে, সেটাই দেখার।