দেশের কোভিড পরিসংখ্যান। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় ক্রমেই নাজেহাল দেশের করোনা পরিস্থিতি। গত বছর সেপ্টেম্বরে দৈনিক সংক্রমণ যেমন শিখরে পৌঁছেছিল, ফের সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে দেশে। এর মোকাবিলা কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে কেন্দ্র এবং বিভিন্ন রাজ্য প্রশাসনের। এ জন্য রাত্রিকালীন কার্ফুও জারি করা হয়েছে বেশ কিছু রাজ্যে। এখনই লকডাউনের কথা ভাবছে না বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে যদিও জানিয়েছেন, এ ভাবে চলতে থাকলে শীঘ্রই লকডাউন জারি হতে পারে সে রাজ্যে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯ হাজার ১২৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ১ কোটি ২৩ লক্ষ ৯২ হাজার ২৬০ জন। গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর দেশের দৈনিক সংক্রমণ হয়েছিল ৯৭ হাজার। তার পর থেকে তা কমতে শুরু করে। কমতে কমতে এক সময় ১০ হাজারে নীচেও নেমেছিল দেশের দৈনিক সংক্রমণ। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমণকে ফের এই পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
দেশের দৈনিক সংক্রমণের অর্ধেকেরও বেশি মহারাষ্ট্রে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার ৯১৩ জন। গত বছরেও এতটা করুণ অবস্থা হয়নি সেখানে। কর্নাটকেও গত ক’দিনে লাফিয়ে বেড়েছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় তা প্রায় ৫ হাজার। ছত্তীসগঢ়ে ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সপ্তাহের শুরু থেকে বাড়তে বাড়তে দিল্লিতে শনিবার নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে তিন হাজারের বেশি। ভোট নিয়ে ব্যস্ত তামিলনাড়ুতেও তা তিন হাজার ছাড়াচ্ছে। উত্তরপ্রদেশেও প্রায় ৩ হাজার। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাবে সংক্রমণ আড়াই থেকে তিন হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। হরিয়ানা তেলঙ্গানা, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক সংক্রমণ গত ক’দিনে লাফ দিয়ে বেড়েছে। কেরলে অবশ্য একই মাত্রায় হচ্ছে সংক্রমণ। মূলত এই ক’টি রাজ্যতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব বেশি দেখা যাচ্ছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশের দৈনিক মৃত্যুও বাড়িয়ে দিয়েছে বেশ কয়েক গুণ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৭১৪ জনের। গত বছর অক্টোবর নাগাদ এই সংখ্যক দৈনিক মৃত্যুর সাক্ষী শেষবারের মতো থেকেছে দেশ। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পর দৈনিক মৃত্যু ফের এই পর্যায়ে পৌঁছে গেল। ৭১৪ জনের মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ৪৮১ জনের।
দেশের করোনা পরিস্থিতি যখন হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে তখনও রাস্তাঘাটে, বাজারে দোকানে সাধারণ মানুষের উদাসীনতা প্রশাসনের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার এক বৈঠকের পর উদ্ধব বলেছেন, ‘‘বর্তমানে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে লকডাউন জারির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। জনগণ আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছে। অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছি। কোন দিকে তাকানো উচিত— স্বাস্থ্য না অর্থনীতি?’’ এর পর তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘এখন লকডাউনের ঘোষণা করছি না। কিন্তু লকডাউন নিয়ে সতর্কবার্তা দিচ্ছি।’’ মহারাষ্ট্রে পুরোপুরি লকডাউন এখনই জারি না হলেও সে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আংশিক বিধি নিষেধ জারি হচ্ছে। যেমন পুণেতে শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে রাত্রিকালীন কার্ফু। আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত তা চলবে। পাশাপাশি পুণেতে রেস্তোরাঁ, বার, মল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হয়েছে। ধর্মীয় স্থানও এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছত্তীসগঢ়েও গত ক’দিনে লাগামছাড়া হয়েছে সংক্রমণ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সে রাজ্যের দুর্গ জেলাতে ৬ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সম্পূর্ণ লকডাউন জারি করা হয়েছে।