Coronavirus in India

বরাদ্দ প্রতিষেধকের ৫০% কিনে নিল ৯ হাসপাতাল গোষ্ঠী, ফের প্রশ্নে কেন্দ্রের টিকা নীতি

শুরুর দিকে কেন্দ্রই রাজ্যকে টিকা সরবরাহ করছিল। ১ মে কেন্দ্র নতুন টিকা নীতি ঘোষণা করে জানায়, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকার খরচ বহন করবে না তারা।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২১ ০৭:০৬

কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন টিকা নীতি দেশে টিকা বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে, এমন আশঙ্কা ছিল অনেকের। সেই আশঙ্কা সত্যি করে জানা গেল, মে মাসের মধ্যে দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলির জন্য বরাদ্দ করোনা প্রতিষেধকের প্রায় ৫০ শতাংশ কিনে ফেলেছে দেশের ৯টি বড় হাসপাতাল গোষ্ঠী।

দেশ জুড়ে প্রতিষেধকের আকাল। শুরুর দিকে কেন্দ্রই রাজ্যকে টিকা সরবরাহ করছিল। ১ মে কেন্দ্রীয় সরকার তার নতুন টিকা নীতি ঘোষণা করে জানায়, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকার খরচ বহন করবে না তারা। টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি থেকে ৫০% টিকা কিনবে কেন্দ্র। ৪৫ বছর বয়সি ও তদূর্ধ্ব, করোনা যোদ্ধা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সেগুলি বিনামূল্যে সব রাজ্যে পাঠানো হবে। বাকি অর্ধেকের ৫০ শতাংশ কিনবে রাজ্যগুলি। এবং শেষ অর্ধেক কিনতে পারবে বেসরকারি হাসপাতালগুলি। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র, রাজ্য এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির থেকে আলাদা আলাদা দাম নিতে পারবে টিকা উৎপাদন সংস্থাগুলি।

Advertisement

আশঙ্কা ছিল, নয়া নীতির ফলে টিকা কেনার বিষয়ে রাজ্যগুলি পারস্পরিক প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলি তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা এবং প্রভাব খাটিয়ে টিকা কেনার ইঁদুর দৌড়ে শামিল হবে। অন্য দিকে, সবচেয়ে বেশি দামের আশায় টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিও বেসরকারি হাসপাতালকে টিকা বেচতে বেশি আগ্রহী হবে।

বাস্তবে ঘটেছেও তাই। মে মাসের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ ১.২০ কোটি ডোজ়ের মধ্যে ৬০.৫৭ লক্ষ ডোজ়ই কিনে ফেলেছে দেশের ৯টি নামকরা হাসপাতাল গোষ্ঠী। অ্যাপোলো হসপিটালস্‌ (১৬.১ লক্ষ), ম্যাক্স হেলথকেয়ার (১২.৯৭ লক্ষ), রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন পরিচালিত এইচএন হসপিটাল ট্রাস্ট (৯.৮৯ লক্ষ), মেডিকা হসপিটালস্‌ (৬.২৬ লক্ষ), ফর্টিস হেলথকেয়ার (৪.৪৮ লক্ষ), গোদরেজ (৩.৩৫ লক্ষ), মণিপাল হেলথ (৩.২৪ লক্ষ), নারায়ণা হৃদয়ালয় (২.০২ লক্ষ) এবং টেকনো ইন্ডিয়া ডামা (২ লক্ষ)। এরা মূলত প্রথম সারির বড় বড় শহরগুলিতে পরিষেবা দেয়।

ফলে টিকা কেনার ইঁদুর দৌড়ে ছোট, মাঝারি শহরগুলিতে ছোট ছোট বেসরকারি হাসপাতালের দৌলতে টিকা মেলার রাস্তা আরও সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। যেমন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কর্নাটকের শিমোগায় একটি বেসরকারি হাসপাতাল সাকুল্যে ৬ হাজার কোভিশিল্ডের ডোজ় জোগাড় করতে পেরেছে। অথচ শিমোগার জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ২২ হাজারেরও বেশি। মুম্বইয়ের মতো শহরে ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলির দাপটে পিছু হটছে মাঝারি ও ছোট বেসরকারি হাসপাতালগুলি। এমনই এক হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, তারা ৩০ হাজার কোভিশিল্ডের ডোজ়ের বরাত দিয়েছিল। কিন্তু মিলেছে মাত্র ৩ হাজার। দর কষাকষিতে তাদের টেক্কা দিচ্ছে বড় গোষ্ঠীগুলি।

কেন্দ্রের এই টিকা নীতিকে ‘খামখেয়ালি’ ও অযৌক্তিক বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। আজ সেই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে বিঁধে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। বেসরকারি ৯ হাসপাতালের ৫০ শতাংশ টিকা কেনার খবর উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি প্রথম থেকেই বলছি যে ভ্যকসিন কিনুক কেন্দ্র আর রাজ্য তা বিতরণ করুক। কিন্তু ভ্যাকসিন নীতিতে বৈষম্য এবং নিরপেক্ষতার অভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে।’

রাহুল ও কংগ্রেসকে পাল্টা একহাত নেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। সম্প্রতি কংগ্রেস শাসিত পঞ্জাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, রাজ্য সরকার বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে বেশি দামে টিকা বেচে মুনাফা করছে। সেই প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ঘাড় ঘুরিয়ে নিজেদের দিকে দেখুন।’’

আরও পড়ুন
Advertisement