বাঙালির ধর্মীয় মানসে রাজসিক দেবী দুর্গা ও তামসিক কালীর পরেই স্থান দেবী জগদ্ধাত্রীর। তিনি সত্ত্বগুণের দেবী। উপনিষদে তার নাম উমা হৈমবতী। বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থে তাঁর উল্লেখও পাওয়া যায়।
জগদ্ধাত্রী শব্দের আভিধানিক অর্থ “জগৎ+ধাত্রী”, অর্থাৎ ত্রিভুবনের ধাত্রী। জগতের পালিকা।
ব্যাপ্ত অর্থে দুর্গা, কালী সহ অন্যান্য শক্তিদেবীগণও জগদ্ধাত্রী। তবে শাস্ত্রমতে এই নির্দিষ্ট জগদ্ধাত্রী রূপের নামকরণের পশ্চাতে রয়েছে সূক্ষ্মতর আধ্ম্যাতিক দর্শন।
দেবী জগদ্ধাত্রী, যে দুর্গারই বিকল্প রূপ, তার সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডীতে। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধের সময়ে মত্ত মহিষাসুর ধারণ করেন হস্তীরূপ। সেই হস্তী দেবীকে বধের চেষ্টা করলে দুর্গা ধারণ করেন এক চতুর্ভুজা মূর্তি।
চক্রদ্বারা তিনি হাতির শুঁড় ছেদ করেন। সেই রূপটিই জগদ্ধাত্রী দেবী রূপে পূজিতা হন। তাই দেখা যায়, দেবী জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহ এক হস্তীর মৃত শরীরের উপর দাঁড়িয়ে।
সংস্কৃতে হাতির অপর নাম করী, সেই অনুসারে অসুরটির নাম করীন্দ্রাসুর। তাকে বধ করেন বলে জগদ্ধাত্রীর অপর নাম করীন্দ্রাসুরনিসূদিনী।
আবার এই মূর্তির অপর ব্যাখ্যাও রয়েছে। মানুষের মন সদা ব্যস্ত। সদা চঞ্চল। তাকে মত্ত হাতির সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই মত্ত মন-করীকে বশ করতে পারলেই সাধনায় সিদ্ধিলাভ সম্ভব।
উন্মত্ত মনের তমোগুণকে নিয়ন্ত্রণ করে রজোগুণকে অন্তরে প্রতিষ্ঠা করাই সাধনার লক্ষ্য। সিংহ রজোগুণের প্রতীক। আবার রজোকে নিয়ন্ত্রণ করে সত্ত্ব গুণ, দেবী স্বয়ং যার প্রতীক। তাই, মা জগদ্ধাত্রী সিংহের উপর আসীন, আর সিংহটি মৃত হস্তীর উপর দাঁড়িয়ে। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।