নিজের সরকারি বাংলো মেরামতির কাজে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরী যে একাধিক নিয়ম ভেঙেছেন, সে দাবিও করেছেন কংগ্রেস নেতা (বাঁ-দিকে) অজয় মাকেন। ছবি: সংগৃহীত।
নিজের সরকারি বাংলোর সংস্কারে ৪৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তবে কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের দাবি, ৪৫ কোটি টাকা নয়, বাংলোর সংস্কারে তার প্রায় ৪ গুণ অর্থাৎ ১৭১ কোটি টাকা খরচ করেছেন কেজরীওয়াল। রবিবার তাঁর আরও দাবি, এ সবই সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হয়েছে।
বাংলো মেরামতির কাজে কেজরী যে একাধিক নিয়ম ভেঙেছেন, সে দাবিও করেছেন মাকেন। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, ‘‘কেজরীওয়ালের বাংলোর আশপাশের অফিসারদের ২২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই বাংলোর সংস্কার শুরু হওয়ার জন্য সেই ফ্ল্যাটগুলি খালি করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য কমনওয়েলথ ভিলেজে ৬ কোটি টাকা করে টাইপ ৫-এর ২১টি ফ্ল্যাট কিনেছে দিল্লি সরকার। সরকারি কোষাগার থেকে সেই অর্থ ঢালা হয়েছে। এ সবই মুখ্যমন্ত্রীর বাংলো সংস্কারের ব্যয়ভারের সঙ্গে যোগ করা উচিত।’’
কেজরীর বাংলো মেরামতির খরচ নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর দিকে তির ছুড়েছে বিজেপি। পদ্মশিবিরের দাবি, ওই সরকারি বাংলোর সংস্কারে ৪৫ কোটি টাকা খরচ করেছেন কেজরী। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের দাবি ছিল, বাংলো সাজাতে ভিয়েতনাম থেকে দামি পাথর এনেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। শুধুমাত্র বাংলোর পর্দা কিনতেই খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। এমনকি, এ খবর ধামাচাপা দিতে সংবাদমাধ্যমকে ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছিলেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিমো। যদিও বিজেপির এ অভিযোগ নস্যাৎ করে আপের পাল্টা দাবি ছিল, ১ একর জায়গা জুড়ে ওই পুরনো বাংলোর ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ায় তা সংস্কার করা হচ্ছে। তবে তার খরচ সম্পর্কে শব্দখরচ করেনি আপ।
বিজেপি ছাড়াও কেজরীর বিরুদ্ধে বাংলো মেরামতিতে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন জেলবন্দি কনম্যান সুকেশ চন্দ্রশেখর। দিল্লির উপরাজ্যপাল ভিকে সাক্সেনাকে লেখা একটি খোলা চিঠিতে সুকেশের দাবি ছিল, বাংলো সাজাতে যে সমস্ত দামি আসবাব কেনা হয়েছে, তার খরচ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া, দক্ষিণ ভারতের এক বিখ্যাত গয়না ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৯০ লক্ষ টাকার রুপোর বাসন পেয়েছেন কেজরী। তার বদলে ওই ব্যবসায়ীকে দিল্লির অভিজাত এলাকায় জমির প্লট দিয়েছেন। এ নিয়ে কেজরীর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিও তুলেছেন সুকেশ। ইতিমধ্যেই অবশ্য বিজেপির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দিল্লির মুখ্যসচিব নরেশ কুমারকে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উপরাজ্যপাল।
সুকেশের মতো উপরাজ্যপালের দ্বারস্থ হবেন মাকেনও। রবিবার তাঁর দাবি, ‘‘দিল্লির লুটিয়েন’স, সিভিল লাইনস এবং স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, এমন এলাকায় সংস্কার করার সময় এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) বাড়ানোর অনুমতি নেই। আমার মনে পড়ে, এককালে ওই এলাকাগুলিতে একতলা বাড়ি ছিল। এই এলাকাটি (যেখানে কেজরীর বাংলো রয়েছে) লুটিয়েন’সের থেকে পুরনো। আজ এখানে ২০ হাজার বর্গফুটের তিনতলা ভবন করা হচ্ছে। রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাই, এতে কি দিল্লির ঐতিহ্য নষ্ট করা হচ্ছে না?’’ মাকেনের দাবি, সংস্কারকাজের জন্য ২৮টি পূর্ণবয়স্ক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।