প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তাঁরই ছবি তুলে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব তথা অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। ছবি: পিটিআই।
মোতেরার নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে তাঁরই ছবি তুলে দিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব তথা অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ। ভারত-অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ টেস্ট শুরুর আগে মাঠে আসেন মোদী এবং সফররত অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানেজ়। স্বাধীনতার পরে ক্রিকেট মাঠে দু’দেশের যে সম্পর্ক শুরু হয়েছিল, তার পঁচাত্তর বছর পেরিয়ে আসার মুহূর্ত উদ্যাপনে অ্যালবানেজ়কে সঙ্গে নিয়ে রথের মতো গাড়িতে চেপে মাঠ প্রদক্ষিণ করেন মোদী।
গোটা বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কংগ্রেস। দলের রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ প্রথমে মোদীর ছবি দিয়ে মোদীকেই জয় শাহের অভ্যর্থনা জানানোর ছবি পোস্ট করে বলেন, ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, আত্মমগ্নতার আরও প্রমাণ আছে।’ বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা এর পরে লেখেন, ‘নিজের জীবনকালে নিজের নামে স্টেডিয়াম করে সেই স্টেডিয়ামই প্রদক্ষিণ করা— আত্মমগ্নতার চূড়ান্ত রূপ।’ সেখানেও না থেমে রমেশ এর পরে জয় ও মোদীর একটি ভিডিয়ো রিটুইট করে বলেন, ‘আত্মমগ্নতা অবিরত চলছে।’
বিজেপির বক্তব্য, এটা ক্রিকেট কূটনীতি, যা দীর্ঘদিন ধরে সফল করে চলেছেন মোদী। মাঠের মধ্যে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে তাঁরই ছবি-সহ একটি স্মারক উপহার দিয়ে আজ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভারতীয় বোর্ডের প্রেসিডেন্ট তথা ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য রজার বিনি। বোর্ড সচিব জয় একই ভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তাঁরই ছবি দেওয়া একটি স্মারক তুলে দিয়েছেন। মোদী, অ্যালবানেজ়, ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের ছবি পোস্ট করে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় বলেন, ‘‘ক্রিকেট কূটনীতি। এটা কাজে দেয়।”
কূটনৈতিক শিবির বলছে, ভারতে জনপ্রিয় এই খেলাটিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কাজে ব্যবহার করতে কখনও কসুর করেননি মোদী। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের সূচনাপর্ব থেকেই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ক্রিকেট কূটনীতির উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালে ভারতে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট। দ্বিপাক্ষিক অসামরিক পরমাণু চুক্তির পাশাপাশি সেই সফরের অন্যতম প্রাপ্তি ছিল ডন ব্র্যাডমানের সংগ্রহশালা থেকে তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্রিকেট সরঞ্জাম এনে ভারতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা। পরবর্তী এক দশকে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চিনের আধিপত্য রুখতে আমেরিকা এবং জাপানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘চতুর্দেশীয় অক্ষ’ (কোয়াড) গড়েছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া। সামরিক স্তরেও সহযোগিতা বেড়েছে দু’দেশের।
শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, আর এক ক্রিকেটামোদী রাষ্ট্র নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় উঠে এসেছে ক্রীড়া কূটনীতি। ২০১৬ সালে সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন কি-র সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মোদী বলেছিলেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গভীর করতে প্রয়োজন ‘ঝোড়ো ব্যাটিং’। বলেছিলেন, “ক্রিকেটের পরিভাষা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সংযোগের অগ্রগতিকে তুলে ধরে। আমরা লং অফে ফিল্ডিং করা ছেড়ে ব্যাটিং পিচে নতুন গার্ড নিয়েছি। রক্ষণাত্মক খেলা থেকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে পৌঁছেছি।”
২০১৯ সালে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মলদ্বীপের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করতেও ক্রিকেট কূটনীতির আশ্রয় নিতে দেখা গিয়েছিল মোদীকে। সে দেশের ক্রিকেটপ্রেমী প্রেসিডেন্টকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের সই-সমেত একটি ব্যাট উপহার দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।