Tripura Assembly Election 2023

জোট-পথেই অতীতের শাপমুক্তির চেষ্টায় কংগ্রেস

শাসক বিজেপি স্বভাবতই অতীত খুঁড়ে বাম-কংগ্রেসের জোটকে আক্রমণে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরায় এসে বিরোধী জোটকে বিঁধেছিলেন।

Advertisement
সন্দীপন চক্রবর্তী
আগরতলা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৮
Picture of the Congress leaders in Tripura.

নিজেদের কেন্দ্রে ভোট - প্রচারে ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহ (বাঁ দিকে) ও আশিস কুমার সাহা। নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি দেখাচ্ছে অতীত। কংগ্রেস দেখাচ্ছে বর্তমান। জমে উঠছে ত্রিপুরার ভবিষ্যতের লড়াই!

উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে কংগ্রেসের শেষ বার ক্ষমতায় আসার কাহিনি ছিল ‘সন্ত্রাসে’র অভিযোগের অধ্যায়ে বোঝাই। কোনও কেন্দ্রে ভোটে জিতেছেন সিপিএমের প্রার্থী, জয়ীর শংসাপত্র দখল করে নিয়ে গিয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী— এমন বৃত্তান্ত এই সে দিনও ত্রিপুরার রাজনৈতিক বলয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। আটের দশকের শেষ এবং নয়ের দশকের গোড়ায় সেই পাঁচ বছরের সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুধীর রঞ্জন মজুমদার এবং সমীর রঞ্জন বর্মণ। সেই সমীরবাবুর পুত্র সুদীপ রায় বর্মণ বিজেপি ঘুরে ফের কংগ্রেসে ফিরে এ বার সিপিএমের সঙ্গে আসন সমঝোতার অন্যতম কারিগর! সিপিএমের হাত ধরে এবং বিজেপির গত পাঁচ বছরের জমানায় ‘গণতন্ত্রের হত্যা’র অভিযোগকে সামনে রেখেই অতীতের সেই ‘কালো অধ্যায়’ থেকে এ বার নিষ্কৃতির পথ খুঁজছে কংগ্রেস।

Advertisement

শাসক বিজেপি স্বভাবতই অতীত খুঁড়ে বাম-কংগ্রেসের জোটকে আক্রমণে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ত্রিপুরায় এসে বিরোধী জোটকে বিঁধেছিলেন। আমবাসা এবং উদয়পুরে জোড়া সভা করতে এসে শনিবার আরও এক ধাপ এগিয়েছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বাম আর কংগ্রেসের জোট দু-মুখো তলোয়ার! ওদের থেকে সাবধানে থাকুন। পাঁচ বছরের সন্ত্রাস আর ২৫ বছরের অপশাসনের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়েছে। যেখানে ওরা ক্ষমতায় থেকেছে, সেখানেই গুন্ডারাজ আর দুর্নীতি হয়েছে। আর সেই সুযোগ দেবেন না।’’ মোদীর আরও মন্তব্য, ‘‘কেরলে বাম-কংগ্রেস কুস্তি করে, ত্রিপুরায় এসে দোস্তি! এদের ভরসা করা যায়?’’

বাংলাতেও বাম-কংগ্রেসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অতীত ছিল। তার পরেও তৃণমূল ও বিজেপির মোকাবিলায় হাত ধরেছিল বাম-কংগ্রেস। সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা এবং বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ত্রিপুরায় এসে মোদী-শাহকে জবাব দিচ্ছেন, ‘‘ভাল লাগছে যে, ওঁরা আমাদের আক্রমণ করছেন! মোদীরা বুঝতে পারছেন, এই জোটই বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বী। শান্তিতে অবাধ ভোট হলে বিজেপির বিপদ হবে। গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য ঘোষণা করেই জোট হয়েছে, গোপন কোনও অভিসন্ধি নেই!’’ কিন্তু বাংলায় ২০২১ সালে তো জোটের ঝুলিতে শূন্য ছিল? অধীরবাবুর দাবি, ‘‘রাজনীতিতে এক বার হার মানেই সব শেষ নয়। বাংলায় এনআরসি-সহ কিছু প্রশ্নে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে মেরুকরণ হয়েছিল, আমরা রুখতে পারিনি। এখানে বিজেপির সঙ্গে বাম-কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই। রাজনীতি পরিবর্তনশীল, পরিস্থিতিও পরিবর্তন হয়।’’

ত্রিপুরা প্র্দেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহেরও যুক্তি, ‘‘বিজেপির এই পাঁচ বছরে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ তার জবাব দিতে তৈরি। বিজেপি নেতারা বুঝতে পারছেন বলেই আক্রমণ করছেন।’’ সমঝোতার সূত্রে কংগ্রেস লড়ছে ১৩টি আসনে। যদিও তাদের দাবি ছিল বেশি। প্রার্থীও দেওয়া হয়েছিল ১৭ কেন্দ্রে, পরে বাড়তি আসনে প্রার্থী প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই টানাপড়েন নিয়ে কি বিজেপির ‘অর্থ ও পেশিশক্তি’র মসৃণ মোকাবিলা হবে? অধীরবাবুর সাফ কথা, ‘‘ত্রিপুরায় সিপিএমের শক্তি আমাদের চেয়ে বেশি। তাই ত্রিপুরার স্বার্থে আমরা আত্মত্যাগ করেছি। কোনও আক্ষেপ নেই!’’

প্রচারের মধ্যেই চড়িলাম কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অশোক দেববর্মা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রার্থীকে নিয়ে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। এমন ঘটনা দেখিয়েই কংগ্রেস নেতারা বোঝাচ্ছেন, গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ রুথতেই বামেদের সঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত।

মুখে কংগ্রেসের লড়াই অবশ্যই বিজেপির সঙ্গে। কিন্তু পাশে ছায়ার মতো লেগে আছে নিজেদের অতীতের সঙ্গে যুদ্ধটাও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement