Haryana Clash

নির্বাচনে জিততেই কি মেরুকরণে শান? হরিয়ানার হিংসা নিয়ে বিজেপিকে তুলোধোনা বিরোধীদের

বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকার মণিপুরের পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি-বেকারত্বের মতো ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় অশান্তিতে মদত দিয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫২
Gurugram.

গুরুগ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দোকান। ছবি: পিটিআই।

সব ঠিক থাকলে মাস ছয়েক পরেই লোকসভা নির্বাচনের দামামা বেজে উঠবে। তার পরে হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচন। তারও আগে চলতি বছরের শেষে বিধানসভা নির্বাচন রাজস্থানে। সে দিকে লক্ষ্য রেখে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে মরু রাজ্য ঘেঁষা হরিয়ানার নুহ, মেওয়াত অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি তৈরি করা হয়েছে বলে এক সুরে অভিযোগ তুলল কংগ্রেস থেকে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী সরকার মণিপুরের পরিস্থিতি, মূল্যবৃদ্ধি-বেকারত্বের মতো ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় অশান্তিতে মদত দিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা গুরুগ্রামের সাংসদ রাও ইন্দরজিৎ সিংহ প্রশ্ন তুলেছেন, মিছিলে কোথা থেকে অস্ত্র এল? কেন হাতে তলোয়ার নিয়ে মিছিল করতে দেওয়া হল? সংসদে আজ তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। হরিয়ানা হিংসার জন্য বিজেপি অবশ্য আঙুল তুলেছে মুসলিমদের দিকেই।

Advertisement

হরিয়ানায় হিংসার জন্য আজ বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সকলের কাছে শান্তির আবেদন জানিয়ে ফেসবুকে রাহুল লিখেছেন, ‘দেশে ঘৃণা ছড়ানো, ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের লড়াই লাগানো কোন ধরনের দেশভক্তি। ক্রোধ আর ঘৃণার দ্বারা দেশ এগোতে পারে না। দেশের প্রগতির জন্য শান্তি জরুরি’। আর মমতার অভিযোগ, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের আর ছ’মাস বাকি। নির্বাচন কমিশন ঠিক করবে কবে ভোট হবে। কিন্তু বিজেপি এখন থেকেই দাঙ্গার রাজনীতি শুরু করেছে। ভোটে জেতার জন্য বিজেপি মানুষ এবং দেশকে ভাগ করতে নোংরা খেলা খেলছে। মানুষকে ভাগ না করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না।’’

কর্নাটকের ভোটের আগে কংগ্রেস বজরং দলের মতো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছিল। তাই খোদ প্রধানমন্ত্রী ওই রাজ্যে গিয়ে ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান তুলেছিলেন। আর এ বার হরিয়ানার হিংসার পিছনেও সেই বজরং দলের দিকেই আঙুল উঠেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি), বজরং দলের মিছিলের আগে দুই সংগঠনের নেতারা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তৃতা করেছিলেন বলে অভিযোগ। বজরং দলের গোরক্ষক বাহিনীর নেতা মনু মানেসরও ভিডিয়োতে প্ররোচনামূলক বিবৃতি দিয়েছিলেন।

তাঁর বিরুদ্ধে রাজস্থানে দুই মুসলিম পশু ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ থাকলেও হরিয়ানা পুলিশ হাত গুটিয়ে ছিল। নুহ, মেওয়াতের হিংসার আঁচ পড়েছে গুরুগ্রামে। যেখানে সমস্ত দেশি, বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার দফতর। দিল্লি, নয়ডায় বজরং দল বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা অভিযোগ করেন, ‘‘হরিয়ানা সরকার জানত, হিংসা হবে। রাজ্য সরকার ষড়যন্ত্র করে হাত গুটিয়ে বসে ছিল।’’ মণিপুরের হিংসা নিয়ে আজ রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিল বিরোধীদের প্রতিনিধি দল। রাষ্ট্রপতির সামনেই হরিয়ানা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের হিংসা নিয়ে একের পর এক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে বিজেপি এবং কেন্দ্র। সে বিষয় তুলে মমতার প্রশ্ন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে একটা ইঁদুর কামড়ালেও কেন্দ্রীয় দল আসে। বিজেপি বাইরের লোক এনে বাংলার বদনাম করতে চক্রান্ত করে, ভুয়ো ভিডিয়ো ছড়ায়। মণিপুর জ্বলছে তিন-চার মাস ধরে। হরিয়ানা জ্বলছে। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সরকারের পক্ষে সকলকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। নিশ্চয়ই সেটা সকলকে দেওয়া সম্ভব নয়। এটা হরিয়ানার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে বাংলায় প্রযোজ্য নয় কেন?”

বিজেপির পাল্টা, মেওয়াতে কট্টর সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি হিংসার জন্য দায়ী। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়ের অভিযোগ, মেওয়াতের মুসলিমদের হিংসার সঙ্গে কংগ্রেসের যোগ আছে। রাহুল গান্ধী আমেরিকায় গিয়ে ইন্ডিয়ান-আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। তারাই হিংসায় প্ররোচনা দিয়েছে। আর কংগ্রেস বলছে, হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে বিজেপি হারবে বুঝেই মেরুকরণের রাজনীতি করছে। আর এ নিয়েমমতার বক্তব্য, কোনও সরকার জাতি-ধর্ম নিয়ে উস্কানি দিতে পারে না। দিল্লির আশেপাশের বহু মানুষ বাড়িঘর ছাড়ছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘তোমরা প্রথমে জাতি দাঙ্গায় ইন্ধন দিয়েছে। তার পর নেভানোর জল মিলছে না। সকলেই বলেন যে মোদীজি যখন দেশের বাইরে যান, তখন বলেন আমরা সকলের জন্য। কিন্তু দেশে যখন এ সব ঘটে, তখন চুপ থাকেন। শুনলাম উনি ১০ অগস্ট মুখ খুলবেন। সেটা কি জ্যোতিষ দেখে ঠিক করেছেন!’’

আরও পড়ুন
Advertisement