গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
তেলঙ্গানায় শাসকদল কংগ্রেসের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) গোপন সমঝোতার অভিযোগ তুলল বিজেপি। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ তথা তেলঙ্গানার প্রথম সারির নেতা কে লক্ষ্মণ অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা ডিএমকে প্রধান এমকে স্ট্যালিনের মধ্যস্থতায় চেন্নাইয়ে কংগ্রেস-বিআরএস নেতাদের গোপন বোঝাপড়া হয়েছে।
চলতি মাসে লোকসভায় আসন পুনর্বিন্যাসের বর্তমান নীতির বিরুদ্ধে স্ট্যালিনের ডাকা বৈঠকে তেলঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিআরএস প্রধান কলভাকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও (‘কেসিআর’ নামেই যিনি পরিচিত) হাজির ছিলেন। ছিলেন কংগ্রেসের নেতারাও। লক্ষ্মণের দাবি, ওই ঘটনাই দু’দলের গোপন বোঝাপড়ার ইঙ্গিতবাহী। তিনি বলেন, ‘‘তেলঙ্গানার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কেসিআর এবং তাঁর পরিবার কংগ্রেসের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া করেছেন।’’
লোকসভা ভোটের আগে কেসিআর কন্যা তথা কবিতাকে দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি। কেসিআরের পুত্র তথা বিআরএস নেতা কেটি রাম রাওয়ের বিরুদ্ধে ‘ফর্মুলা ই কার রেসিং দুর্নীতি’ মামলার তদন্ত চলছে। এই আবহে পদ্ম শিবিরের অভিযোগ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে। সে রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও দু’দলের সমঝোতায় অনুঘটক বলে মনে করছেন তাঁরা। একদা কেন্দ্রে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী ছিলেন কেসিআর। ২০১৪ সালে তেলঙ্গানা গঠনের পর তাঁর দল তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (পরে যা নাম বদলে বিআরএস হয়েছে) ক্ষমতা দখল করেছিল। কংগ্রেসেই ছিল প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
কিন্তু ২০২৩ সালে বিধানসভা ভোটে বিআরএসকে হারিয়ে কংগ্রেসের ক্ষমতা দখলের পরে দাক্ষিণাত্যের ওই রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের ফল বলছে বিআরএসকে পিছনে ফেলে কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে এসেছে বিজেপি। গত লোকসভা ভোটে তেলঙ্গানার ১৭টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলেই আটটি করে জিতেছে। হায়দরাবাদ লোকসভা আসনে জিতেছেন ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। কিন্তু বিআরএসের ঝুলি শূন্য!
কংগ্রেস ৪০, বিজেপি ৩৫ শতাংশ ভোট পেলেও প্রাক্তন শাসকদলের ঝুলিতে মাত্র সাড়ে ১৬ শতাংশ। অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৯টিই ছিল কেসিআরের দলের দখলে। বিজেপি জিতেছিল চারটি আসন এবং কংগ্রেসের দখলে ছিল মাত্র তিনটি। হায়দরাবাদে জিতেছিল মিম। চলতি বছরে তেলঙ্গানায় বিধান পরিষদের ভোটেও কংগ্রেস-বিজেপি দ্বৈরথে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে বিআরএস। রাজনীতিতে টিকে থাকতে কি এ বার তাই ‘ইন্ডিয়া’-মুখী ভারত রাষ্ট্র সমিতি?