India-US Relationship

আমেরিকাও দরজা খুলুক, দাবি দিল্লির

চার দিনের এই দর কষাকষির পরে মোদী সরকার মনে করছে, ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ভাল ভাবেই এগোচ্ছে। সেই অগ্রগতির ভিত্তিতেই এ বার ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত, চড়া শুল্ক থেকে ভারতকে রেহাই দেওয়া।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৫ ০৯:৪৫
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

চার দিন ধরে দর কষাকষি চলছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য প্রতিনিধিরা দাবি তুলেছেন, আমেরিকা থেকে আমদানি করা গাড়ি, ওয়াইন, পেট্রোপণ্য থেকে আপেল, আমন্ড, ক্র্যানবেরির উপরে শুল্ক কমাক ভারত। অন্য দিকে, ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা জানান, নরেন্দ্র মোদী সরকার ইতিমধ্যেই মোটরবাইক থেকে হুইস্কিতে শুল্ক কমিয়েছে। ভারতের কৃষক ও ছোট-মাঝারি শিল্পের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে যেখানে সম্ভব, সেখানে আরও শুল্ক কমানো হবে। তবে আমেরিকাকেও ভারতের বস্ত্র, গয়না-অলঙ্কারের জন্য আরও বেশি করে বাজার খুলে দিতে হবে।

Advertisement

চার দিনের এই দর কষাকষির পরে মোদী সরকার মনে করছে, ভারত-আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ভাল ভাবেই এগোচ্ছে। সেই অগ্রগতির ভিত্তিতেই এ বার ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত, চড়া শুল্ক থেকে ভারতকে রেহাই দেওয়া।

মোদী সরকারের এই ‘প্রত্যাশা’ উস্কে দিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন, তাঁর ‘খুবই ভাল বন্ধু’ নরেন্দ্র মোদী ‘খুবই স্মার্ট’। তাই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা ভাল ভাবেই শেষ হবে। ট্রাম্প অবশ্য একই সঙ্গে খোঁচা দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত আমেরিকার পণ্যে চড়া শুল্ক চাপায়। যার প্রেক্ষিতেই তিনি ভারতের মতো দেশগুলির উপরে ২ এপ্রিল থেকে পাল্টা চড়া শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরেই ঠিক হয়েছিল, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। তার পরে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল আমেরিকা গিয়ে সে দেশের বাণিজ্যসচিব ও আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন। বুধবার থেকে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত আমেরিকার সহকারী বাণিজ্যসচিব ব্রেন্ডন লিঞ্চের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের বৈঠক চলছিল। চার দিনের দর কষাকষির শেষে শনিবার বাণিজ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ‘এ বার বিভিন্ন ক্ষেত্র ধরে ধরে বিশেষজ্ঞরা ভার্চুয়াল বৈঠক শুরু করবেন। যাতে চলতি বছরের হেমন্ত বা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই বাণিজ্য চুক্তির প্রথম পর্যায় চূড়ান্ত হতে পারে। চার দিনের বৈঠকে দু’দেশের ফায়দার জন্য শুল্ক কমানো, বাজার খুলে দেওয়া, শুল্ক ছাড়া বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্যান্য বাধা তুলে দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’ ইতিমধ্যে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রিও শুক্রবার আমেরিকার উপ-বাণিজ্যসচিব ক্রিস্টোফার ল্যান্ডোউয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ফোনে আলোচনা করেছেন। ক্রিস্টোফার বিক্রমকে ভারতের বেআইনি অনুপ্রবেশ নিয়ে সদর্থক অবস্থানের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাজেটে হুইস্কি থেকে গাড়িতে শুল্ক কমানো হয়েছে। সম্প্রতি গুগল, মেটা-র মতো সংস্থার উপরে ডিজিটাল কর তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা শুল্ক কমাতে রাজি। আমেরিকা চায়, আমরা ওদের থেকে আরও জ্বালানি আমদানি করি। আমেরিকা চায়, ওদের দেশ থেকে আমদানি করা আপেল, আমন্ড, ক্র্যানবেরি, ওয়াইনে শুল্ক কমানো হোক। কিন্তু আমেরিকাকেও ইতিবাচক বার্তা দিতে হবে। যে সব দেশ নিজেদের মুদ্রার দর কমিয়ে আমেরিকাকে অসুবিধায় ফেলছে, তাদের সঙ্গে ভারতকে এক তালিকায় ফেলে দেওয়া চলবে না।’’ বাণিজ্য চুক্তি করে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০৩০-এর মধ্যে এখনকার ১৯,০০০ কোটি ডলার থেকে ৫০,০০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ওই বাণিজ্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘আলোচনা যখন ভাল ভাবেই এগোচ্ছে, তখন পাল্টা চড়া শুল্ক বসানোর মতো পদক্ষেপ সেই আলোচনায় ধাক্কা দিতে পারে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন