Satyapal Malik

পুলওয়ামায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপালের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি!

জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন, পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে জঙ্গি হানার পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৩৬
(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং সত্যপাল মালিক।

(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী এবং সত্যপাল মালিক। — ফাইল চিত্র।

পুলওয়ামাকাণ্ড নিয়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করার পরেই সিবিআই নোটিস পেয়েছিলেন তিনি। মোদী জমানায় জম্মু ও কাশ্মীর-সহ একাধিক রাজ্যের রাজ্যপালের পদে থাকা সেই সত্যপাল মালিকের বাড়িতে এ বার তল্লাশি অভিযানে নামল কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরের কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে বৃহস্পতিবার দেশের মোট ২৯টি ঠিকানায় হানাদারি শুরু হয়েছে।

Advertisement

মোদী জমানায় জম্মু-কাশ্মীর-সহ চারটি রাজ্যের রাজ্যপালের পদে থাকা বিজেপি নেতা সত্যপাল গত বছর একটি সাক্ষাৎকারে অভিযোগ তুলেছেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গি হানায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুর পরে খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কারণ, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের গাফিলতি, নিরাপত্তায় ফাঁক থাকার ফলেই কনভয়ে হামলা হয়েছে।

সত্যপালের দাবি, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন, এটি অন্য বিষয়। সত্যপাল যেন মুখ বন্ধ রাখেন। ওই সাক্ষাৎকারেই সত্যপাল আভাস দিয়েছিলেন, পুলওয়ামায় জওয়ানদের মৃত্যুকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানো হয়ে থাকতে পারে। ঘটনাচক্রে, গত লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তরুণ ভোটারদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘প্রথম বারের ভোটারদের বলছি, আপনাদের প্রথম ভোট পুলওয়ামায় যে সব বীর শহিদ হয়েছেন, তাঁদের নামে সমর্পিত হতে পারে!’’

ওই সাক্ষাৎকারেই সত্যপাল অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৮ সালের অগস্ট থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসাবে ৩০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব এসেছিল দু’টি ফাইল ছাড়ার জন্য। সিবিআই দু’টি এফআইআর রুজু করে। একটি কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যটি রিলায়্যান্স জেনারেল ইনশিওরেন্স সংক্রান্ত। সেই অভিযোগের জেরে গত বছর সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল তাঁকে। যদিও তিনি ‘অভিযুক্ত’ কি না, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থাকে ‘কিরু হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট’ (এইচইপি)-এর নির্মাণ সংক্রান্ত ২,২০০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় কোনও দুর্নীতি হয়েছিল কি না, তার তদন্ত করছে সিবিআই। ‘চেনাব ভ্যালি পাওয়ার প্রজেক্টস (পি) লিমিটেড’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান নবীন কুমার চৌধুরী এবং এমএস বাবু, এমকে মিত্তল, অরুণকুমার মিশ্রের মতো প্রাক্তন কর্তা এবং বরাত পাওয়া সংস্থা প্যাটেল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের বিরুদ্ধে আগেই মামলা করেছে সিবিআই।

কিরুকাণ্ডের পাশাপাশি এর আগে জম্মু ও কাশ্মীরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য রিলায়্যান্স বিমা মামলা নিয়ে সত্যপালকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি ২০১৮ সালে শিল্পপতি অনিল অম্বানীর বিমা সংস্থার একটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। সত্যপালের অভিযোগ ছিল, বিমা প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। তার পর মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। এই বিমা প্রকল্পের আওতায় ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের সাড়ে তিন লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী। ২০১৮-এর সেপ্টেম্বরে বিমা প্রকল্পটি চালু হয়। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই তা বাতিল করেন তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এই বিমা প্রকল্প নিয়ে খুশি নন। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের অসন্তোষ প্রকাশ্যে আসার পর আমি গোটা প্রকল্পটির নথি খুঁটিয়ে পড়ি। পুরোটা পড়ে দেখার পর আমার মনে হয়েছিল ভুল ভাবে বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাই বাতিল করে দিই।’’ এই পরিস্থিতিতে মোদী সরকার সত্যপালের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পথে হাঁটছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

আরও পড়ুন
Advertisement