বিহারের হাসপাতালে সদ্যোজাতকে পরীক্ষা না-করেই মৃত ঘোষণা করে দেওয়ার অভিযোগ। —ফাইল চিত্র।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন যুবক। নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে প্রসবও হয়। কিন্তু প্রসবের পর কাঁদেনি সদ্যোজাত সন্তান। কর্তৃব্যরত নার্স তখনই শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন দেন। ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এ সই করে দেন হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক। কিন্তু সেখান থেকে বেসরকারি হাসপাতালে যেতেই ‘ম্যাজিক’! সরকারি খাতায় সেই ‘মৃত’ শিশুই চিৎকার করে কেঁদে উঠল বেসরকারি হাসপাতালে। পরে নিজের ‘ভুল’ স্বীকার করে নিয়েছেন সরকারি হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।
বিহারের পশ্চিম চম্পারন জেলার ঘটনা। সেখানকার বাসিন্দা বাহাদুর বাইঠা এবং তাঁর স্ত্রী জ্যোতি কুমারী। গত ২৪ মার্চ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জ্যোতিকে নিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েছিলেন বাহাদুর। সাধারণ পদ্ধতিতেই জ্যোতি সন্তান প্রসব করেন। তাঁর পেটে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু জন্মের পর সদ্যোজাত সন্তান কিছুতেই কাঁদছিল না। অভিযোগ, কর্তব্যরত নার্স ওই শিশুটিকে কোলে নিয়ে তাকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করে দেন। জানান, জ্যোতি মৃত সন্তান প্রসব করেছে।
নার্সের কথা শুনে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্তব্যরত চিকিৎসকও কোনও রকম পরীক্ষা না-করেই শিশুটির ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লিখে দেন বলে অভিযোগ। অনুরোধ করা সত্ত্বেও শিশুটিকে পরীক্ষা করে দেখেননি তিনি। এর পর স্ত্রীকে নিয়ে ওই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান যুবক। নিকটবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে ওই সদ্যোজাতের শারীরিক পরীক্ষা করে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সে জীবিত। শিশুটিকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়। কিছু ক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে সে কেঁদে ওঠে।
এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসার পর বিহারে সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলা সিভিল সার্জেন বিজয় কুমার ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক এবং নার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। যদি চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম আফরোজ়। ওই সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনিই দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নিজের ‘ভুল’ মেনে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, নার্সের কথা শুনে তার উপর ভিত্তি করে তিনি সদ্যোজাতের মৃত্যুর শংসাপত্র লিখে দিয়েছিলেন। শিশুটিকে পরীক্ষা করে দেখেননি। এই কাজ করা তাঁর উচিত হয়নি। অভিযুক্ত নার্সের নাম রাধিকা কুমারী। এ প্রসঙ্গে তাঁর কোনও বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।