কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
মুম্বই বৈঠকের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন এবং আহ্বায়ক নিয়ে আজ সকাল থেকে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু হল বিরোধী শিবিরে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছিল, জোটের সার্বিক আহ্বায়ক হিসেবে কাউকে রাখা হবে না। কেন না, তা হলে সেই ব্যক্তিকে সরাসরি এনডিএ-র সর্বাধিনায়ক নরেন্দ্র মোদীর প্রতিপক্ষ মুখ হিসাবে দাঁড় করাবে বিজেপি। কিন্তু আজ সকালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তৃণমূল, ডিএমকে-র মতো কিছু দলের কাছে একটি নতুন প্রস্তাব গিয়েছে বলে সূত্রের খবর। সেই প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেকে ইন্ডিয়া-র চেয়ারপার্সন করার কথা ভাবা হোক। এই প্রস্তাবের পক্ষে কংগ্রেস যে যুক্তিগুলি দিচ্ছে, তাতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কোনও অসম্মতি নেই বলেই প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তবে তৃণমূল বা ডিএমকে-র আপত্তি না থাকলেও জোটের নেতা হিসাবে কংগ্রেসের সভাপতিকে মানতে চাইবে না আম আদমি পার্টি। এখনও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা হয়ওনি। পাশাপাশি নেতৃত্বের আকাঙ্খা রয়েছে জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমারেরও। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের যুক্তি, মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের যে সমন্বয় কমিটি তৈরি হবে, তার আহ্বায়কের দায়িত্ব নীতীশকে দিয়ে দেওয়া হলে তিনি কিছুটা শান্ত থাকবেন।
ফলে মুম্বইয়ে সবাই এক টেবিলে না-বসলে যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য তৈরি হবে না, সে কথা স্পষ্ট। কিন্তু তার আগে অর্থাৎ আগামিকালও বিভিন্ন দলের নেতাদের মধ্যে চলবে ঘরোয়া স্তরে আলোচনা। আরও একটি নতুন প্রস্তাব আজ আলোচনায় উঠে এসেছে বলে সূত্রে জানা গিয়েছে। তা হল, জোটের একজন মাত্র আহ্বায়ক থাকলে নেতৃত্বের প্রশ্নে বিভ্রান্তি আসতে পারে, মোদীও বাড়তি সুবিধা পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু একের বদলে যদি চার জন নেতাকে ইন্ডিয়ার আহ্বায়ক করা যায়, তা হলে জোটের ভিতর কোনও বঞ্চনার প্রশ্ন উঠবে না। তাঁরা কেউই দলের প্রথম সারির নেতাও হবেন না, ফলে এঁদের সঙ্গে মোদীর তুলনা করার পরিসরও তৈরি হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। উত্তর, পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণ এই চারটি জ়োন ভাগ করে, এক একটি জ়োনের জন্য এক এক জন আহ্বায়ক স্থির হতে পারে। সে ক্ষেত্রে উত্তর থেকে কংগ্রেস এবং দক্ষিণ থেকে ডিএমকে-র প্রতিনিধিই থাকতে পারেন। পূর্বে দাবিদার রয়েছে তৃণমূল এবং জেডিইউ। সে ক্ষেত্রে নীতীশ যদি নিজে সমন্বয় কমিটিরই আহ্বায়ক হয়ে যান, তা হলে তৃণমূল থেকেই ইন্ডিয়া জোটের পূর্ব জোনের আহ্বায়ক বাছা হতে পারে। তবে রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এই সব কিছুই আপাতত প্রস্তাব এবং চিন্তাভাবনার স্তরে। শেষ পর্যন্ত সব দলগুলির ঐকমত্যের ভিত্তিতেই যা হওয়ার হবে।
খড়্গেকে ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সন করার পিছনে তিনটি যুক্তি দেখাচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রথমত, খড়্গেকে সামনে রেখে দলিত তাসকে ব্যবহার করা। কোনও দলিত নেতাকে একটা পর্যায়ের পরে রাজনৈতিক ভাবে আক্রমণ করতে পারবেন না মোদী, এমনটাই ভাবা হচ্ছে। খড়্গে দলিত এবং সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা নেতা। দ্বিতীয়ত, তাঁর বিরুদ্ধে পরিবারবাদের অভিযোগ কোনও ভাবেই তোলা সম্ভব নয়। খড়্গের বাবা ছিলেন অতি সাধারণ এক খেতমজুর। পরবর্তী কালে কারখানাতেও কাজ করতেন। রাজনীতি বা ক্ষমতার ধারে কাছেও ছিল না সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে প্রান্তিক খড়্গে পরিবার। তৃতীয়ত, মল্লিকার্জুন খড়্গের বিরুদ্ধে হিন্দু-বিরোধী বা মুসলমান তোষণের অভিযোগ তোলা যাবে না কোনও মতেই। তাঁর মা এবং বোন মারা গিয়েছিলেন হায়দরাবাদের নিজামপন্থী মুসলমান রাজাকারদের হাতে। তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নিজেই সাশ্রু নয়নে সংসদে এ কথা জানিয়েছিলেন খড়্গে।
অন্য দিকে, নীতীশও পিছড়ে বর্গ-এর কুর্মি নেতা। যিনি মুখে বলছেন, কোনও পদের প্রতিই তাঁর আসক্তি নেই। কিন্তু ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তাঁর ভূমিকাকে ছেঁটে রাখার জন্য. তিনি আশাহত। আজ যদিও তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোনও পদের প্রয়োজন নেই। সবাই বিজেপি বিরোধিতায় এককাট্টা থাকুক।” অদূর ভবিষ্যতেই ‘ইন্ডিয়া’ নতুন দল আসতে পারে বলেও জানিয়েছেন নীতীশ।