Prashant Kishor

Prashant Kishor: একই ভোটে কী করে দুই দলের হয়ে কাজ? কংগ্রেস, তৃণমূল, পিকে এবং দু’নৌকা রহস্য

পিকে কংগ্রেসে যোগ দিলে ভবিষ্যতে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করতে গেলে স্বার্থের সংঘাত এসে পড়তে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২১ ০৫:৫১
ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর।

ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর। —ফাইল চিত্র।

সংসদের বাদল অধিবেশনের পরে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচন হতে পারে। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর সত্যিই কংগ্রেসে যোগ দিলে, দলের সভাপতি নির্বাচনের পরেই তাঁকে কোনও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

কংগ্রেস সূত্র বলছে, প্রশান্ত কিশোর মূলত ২০২৪-এর আগে কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা নিয়ে গাঁধী পরিবারের সামনে হাজির হয়েছিলেন। মঙ্গলবার এই বিষয়েই রাহুল গাঁধীর বাসভবনে তাঁর সঙ্গে রাহুল-প্রিয়ঙ্কার বৈঠক হয়। কিন্তু এটাই প্রথম আলোচনা নয়। এর আগেও গাঁধী পরিবারের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের একাধিক বার কথা হয়েছে বলে কংগ্রেসের একাংশ দাবি করছে। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি দলের শীর্ষ স্তরের নেতাদের থেকেও আলাদা রাখা হয়েছিল। এ বার রাহুল-প্রিয়ঙ্কা পি কে-কে প্রস্তাব দিয়েছেন, তিনি বাইরে থেকে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ না-করে দলে যোগ দিয়েই কাজ করুন।

Advertisement

রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের হয়ে কাজ করেছেন। বিধানসভা ভোটের পরেও তিনি তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। ২০২৪-এর আগে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে জাতীয় স্তরে বিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে তুলে ধরাও যে তাঁর দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে, তা বলা বাহুল্য। আবার তিনিই ২০২৪-এ কংগ্রেসকে চাঙ্গা করার দায়িত্ব নিতে চাইছেন। এর মধ্যে কি স্বার্থের সংঘাত এসে পড়তে পারে?

কংগ্রেস তথা রাজনৈতিক সূত্রের ব্যাখ্যা, পি কে-র প্রধান কাজ হবে, এই স্বার্থের সংঘাত নিয়ে সংশয় মিটিয়ে ফেলা। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা নিয়ে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অবহিত। বিরোধী জোটে কংগ্রেসের ভূমিকাও এখন তৃণমূল অস্বীকার করছে না। তৃণমূলের সূত্র হল, যার যেখানে শক্তি, সে সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ুক। এই সূত্র মেনে পঞ্জাব, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় থেকে হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যের ১২০-১২৫টি আসনে কংগ্রেসই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলই হবে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি। কিন্তু এই সূত্র মানতে গেলে বাংলায় কংগ্রেসকে তৃণমূলের লেজুড়বৃত্তি করতে হবে। পি কে কংগ্রেসে যোগ দিলে এই ধাঁধার সমাধান কী ভাবে করবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০২৪-এ লোকসভা ভোট। তার আগে তৃণমূল ও কংগ্রেস কাছাকাছি এলেও, বাংলার পরবর্তী বিধানসভা ভোটে কোনও সমস্যা হবে না। কারণ তা হবে আরও দু’বছর পরে, ২০২৬-এ।

রাহুল-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে পি কে-র বৈঠকের দু’দিন পরে আজ মধ্যপ্রদেশের নেতা কমলনাথ দিল্লিতে এসে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রিয়ঙ্কাও সে সময় সনিয়ার বাড়িতে হাজির ছিলেন। শুক্রবার প্রায় দেড় বছর পরে তিনি লখনউ যাচ্ছেন। সনিয়া-প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পরে জল্পনা শুরু হয়, কমলনাথকেও কংগ্রেসের জাতীয় স্তরে কোনও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হবে কি না। এমনকি তাঁকে কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বা অন্তর্বর্তী সভাপতির পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। যদিও দশ জনপথ থেকে বেরিয়ে কমল সব জল্পনা উড়িয়ে জানিয়েছেন, এমন সম্ভাবনা নেই।

কংগ্রেস সূত্রেরও ব্যাখ্যা, আগামী বছর পঞ্জাবে বিধানসভা ভোট। ইন্দিরা গাঁধীর হত্যার পরে শিখ-বিরোধী হিংসায় কমলনাথের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ বহু দিনের। তাঁকে এখন কংগ্রেসের গুরুদায়িত্ব দেওয়ার অর্থ, অকালি দল, বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া। তবে অমরেন্দ্র সিংহের সঙ্গে কমলনাথের বন্ধুত্বের সুবাদে কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কমলনাথকে কাজে লাগানো হতে পারে।

কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য মনে করছেন, আহমেদ পটেলের মৃত্যুর পরে কমলনাথকে দলের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আপাতত পবন বনসল এই দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু কমলনাথের সঙ্গে শিল্পমহলের সম্পর্ক ভাল। তবে ৭৪ বছরের কমলনাথ ছিন্দওয়াড়া ছেড়ে দিল্লিতে এসে পাকাপাকি ভাবে থাকতে রাজি হবেন কি না, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে।

Advertisement
আরও পড়ুন