অঙ্কিতা হত্যাকাণ্ডের পরতে পরতে রহস্য। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কথা কাটাকাটির পরই তরুণী রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতাকে খালে ফেলে দিয়েছিলেন অভিযুক্তরা। তার পর খালের ধারে বসেই মোমো দিয়ে মদ্যপান করেন। ধৃতদের জেরা করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেল পুলিশ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন বছর উনিশের তরুণী। পাঁচ দিন নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার হৃষিকেশের চিলা খাল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত রিসর্ট মালিক তথা বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যর ছেলে পুলকিত আর্য এবং তাঁর দুই সঙ্গী সৌরভ ভাস্কর এবং অঙ্কিত গুপ্ত।
রিসর্টের নিরাপত্তারক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর খুব বিচলিত দেখাচ্ছিল রিসেপশনিস্ট তরুণীকে। কাঁদতে কাঁদতে ফোন করে এক সহকর্মীকে ব্যাগ দিয়ে যাওয়ার জন্যও বলেছিলেন। তার কিছু ক্ষণ পর, রাত ৮টা নাগাদ তরুণীকে নিয়ে পুলকিত, সৌরভ এবং অঙ্কিত হৃষিকেশের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। রাত সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওই তিন জন রিসর্টে ফিরে আসেন। কিন্তু তরুণীকে তাঁদের সঙ্গে দেখতে পাননি বলে পুলিশকে জানিয়েছেন রিসর্টের নিরাপত্তারক্ষী।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁরা চার জন হৃষিকেশে গিয়েছিলেন। ওই দিন রিসর্টে তরুণী এবং পুলকিতের মধ্যে একপ্রস্ত কথা কাটাকাটি হয়। দুই সঙ্গীকে পুলকিত বলেন, ‘‘ওকে হৃষিকেশ নিয়ে যাওয়া উচিত। চলো আমরা সেখানে যাই।” তার পর তাঁরা সকলে এক সঙ্গে রিসর্ট থেকে বেরিয়ে যান।
চার জনে এক সঙ্গে রিসর্ট ছাড়লেও আলাদা আলাদা গাড়িতে গিয়েছিলেন। হৃষিকেশ ব্যারেজ হয়ে তাঁরা সকলে এমসের কাছে পৌঁছন। এর পর তাঁরা সেখান থেকে চিলা রোডে যান। খালের পাশেই এই রোড। খালের ধারে একটি অন্ধকার জায়গা বেছে নেন পুলকিতরা। পুলিশকে ধৃতরা জানিয়েছেন, খালের ধারে বসেও তরুণীর সঙ্গে আর এক দফা কথা কাটাকাটি হয় পুলকিতের।
তবে এ বার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তরুণী পুলকিতকে ধমকি দেন, রিসর্টে তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, সব বলে দেবেন। তার পরই পুলকিতের ফোন খালে ছুড়ে ফেলে দেন তরুণী। তখন পুলকিতরা মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ফোন খালে ফেলে দেওয়ার পরই তরুণীকে মারধর করেন তিন জন মিলে। তার পর খালের জলে ঠেলে ফেলে দেন। তার পর সেখানে বসে অভিযুক্তরা মোমো দিয়ে মদ পান করেন। তরুণী তখন খালের জলে ডুবে যাচ্ছিলেন। ডুবে যাওয়ার আগে বার দুয়েক বাঁচানোর জন্য আর্জিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ডুবতে দেখেও গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে রিসর্টের উদ্দেশে রওনা দেন পুলকিতরা।
#WATCH | Uttarakhand: Demolition underway on orders of CM PS Dhami, at the Vanatara Resort in Rishikesh owned by Pulkit Arya who allegedly murdered Ankita Bhandari: Abhinav Kumar, Special Principal Secretary to the CM
— ANI (@ANI) September 24, 2022
(Earlier visuals) pic.twitter.com/8iklpWw0y6
পুলিশ জানিয়েছে, তরুণী ডুবে যেতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিযুক্তরা। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার পরিকল্পনাও করেন পুলকিতরা। রিসর্টের শেফ মনবীরকে ফোন করেন পুলকিত। চার জনের জন্য খাবার তৈরি করতে বলেন। কিন্তু তিন জনে রিসর্টে পৌঁছলে শেফ তাঁদের জিজ্ঞাসা করেন, তরুণী কোথায়? পুলকিতরা জানিয়ে দেন, তরুণী তাঁদের সঙ্গে ছিলেন না।
এর পরই অঙ্কিত শেফের হাত থেকে খাবার নিয়ে সেটি তরুণীর ঘরে রেখে দিয়ে আসেন। পর দিন সকালে অর্থাৎ ১৯ সেপ্টেম্বর পুলকিতরা হরিদ্বারের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখানে একটি নতুন মোবাইল কেনেন পুলকিত। এবং একই নম্বরের সিম নেন। এর পর সেখান থেকে রিসর্টের এক কর্মীকে ফোন করে তরুণীর ঘরে যেতে বলেন এবং তাঁর ফোন নিয়ে আসতে বলেন। সেখানে গিয়ে তরুণীর ফোন খুঁজে না পেয়ে পুলকিতকে ফোন করেন ওই কর্মী। এর পরই পরিকল্পনামাফিক পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করেন পুলকিতরা।
অন্য দিকে, তিন দিন ধরে মেয়ের কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তরুণীর মা এবং গ্রামবাসীরা জেলাশাসকের দফতরে যান। মেয়ের খোঁজ চালানোর জন্য আর্জি জানান। এর পরই জেলাশাসকের নির্দেশে পাওরির সিনিয়র পুলিশ সুপার (এসএসও) যশবন্ত সিংহ চৌহান একটি বিশেষ দল গঠন করেন। তার পরই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনের কিনারা করে পুলিশ।
তরুণী খুনে ছেলে গ্রেফতার হওয়ার পরই বিজেপি নেতা বিনোদ আর্যকে বহিষ্কার করে দল। তাঁদের রিসর্টে বুলডোজার চালায় প্রশাসন। আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।