দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ইন্ডিয়া গেটের কাছে কর্তব্য পথে জল ছেটানো হচ্ছে। ছবি: পিটিআই।
দূষণে হাঁসফাঁস অবস্থা দিল্লিবাসীর। টানা পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ৪০০-এর উপরে। সেই সঙ্গে ভোগান্তি বাড়িয়েছে ধোঁয়াশা। রবিবার সকালেও দিল্লির আকাশ ছিল ধোঁয়াশায় ঢাকা। সে কারণে কমল দৃশ্যমানতা। গাড়ি চলল ধীর গতিতে। বিমান ট্র্যাকিং সংস্থা ফ্লাইটরাডার বলছে, দেরিতে উড়েছে শতাধিক বিমান। তিনটি বিমান বাতিলও হয়েছে।
কেন্দ্রের পরিসংখ্যান বলছে, রবিবার সকালে দিল্লিতে বাতাসের গড় গুণমান সূচক ছিল ৪২৮, যা ‘ভয়ানক’ পর্যায়ে পড়ে। বাতাসের গুণমান সূচক শূন্য থেকে ৫০-এর মধ্যে হলে তা ‘ভাল’ বলে ধরে নেওয়া হয়। গুণমান সূচক ৫১ থেকে ১০০ হলে তা ‘সন্তোষজনক’ বলে ধরা হয়। বাতাসের গুণমান সূচক ১০১ থেকে ২০০ হলে ‘মাঝারি’ বলে ধরে নেওয়া হয়। গুণমান সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে ‘খারাপ’, ৩০১ থেকে ৪০০ হলে ‘খুব খারাপ’, ৪০১ থেকে ৪৫০ ‘ভয়ানক’ এবং ৪৫০-এর বেশি হলে ‘অতি ভয়ানক’ ধরে নেওয়া হয়।
দিল্লির বাতাসের গুণমান নির্ধারণের জন্য রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় রয়েছে ৩৫টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। তার মধ্যে ২২টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে বাতাসের গুণমান সূচক ধরা পড়েছে ‘ভয়ানক’ পর্যায়ে। রবিবার সকালে বাওয়ানায় বাতাসের গুণমান সূচক বা একিউআই ছিল সবচেয়ে খারাপ (৪৭১)। মুণ্ডকা, ওয়াজিরপুরের একিউআই ছিল ৪৬৩। আনন্দবিহারের একিউআই ৪৫৭। দিল্লির এই জায়গাগুলিতে একিউআই ‘অতি ভয়ানক’-এর পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় বাতাসের মান ৪৪৫। রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার এই পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগে প্রশাসন থেকে পরিবেশবিদেরা। মনে করা হচ্ছে, দূষণের এই ফল ভুগতে পারেন নাগরিকেরা। শ্বাসকষ্ট-সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাঁদের। ধোঁয়াশার কারণে রাজধানীর রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন চালকেরা। বিমান ওড়াতেও বিপাকে পড়তে হচ্ছে পাইলটদের। সে কারণে দেরিতে চলছে বহু বিমান।
দিল্লির থেকে কম হলেও নয়ডা, গুরুগ্রামের একিউআই খুব ভাল নয়। রবিবার নয়ডার বাতাসের গুণমান ছিল ৩০৮। গুরুগ্রামের একিউআই ছিল ৩০৭। গাজ়িয়াবাদে তা ছিল ৩৭২।
রাজধানীর রাস্তায় যাতে একসঙ্গে অনেক গাড়ি না নামে, তার জন্য সরকারি অফিসগুলিতেও সময় বদলানোর কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। রাস্তায় যান চলাচলও কমবে, তাতে দূষণের মাত্রাও কিছুটা কমবে বলে যুক্তি দিল্লি সরকারের। ঘোষণা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস শুরু হবে সকাল ৯টায়। শেষ সাড়ে ৫টায়। দিল্লি সরকারের অফিসগুলি শুরু হবে সকাল ১০টায়, শেষ হবে সাড়ে ৬টায়। আর দিল্লি পুরনিগমের কাজ শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৮টা। শেষ হবে বিকেল ৫টা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান’ (গ্র্যাপ-৩) চালু করেছে দিল্লি সরকার। যে এলাকায় বেশি যানবাহন চলে, সেখানে নিয়মিত জল ছেটানো হচ্ছে। দূষণ বৃদ্ধি করতে পারে এমন কাজগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিএস-৩ পেট্রল এবং বিএস-৪ ডিজেল গাড়িগুলি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আইন অমান্য করলে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে বলেও প্রশাসনের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছে। দিল্লির বাইরে থেকে আসা ডিজেলচালিত ছোট বাণিজ্যিক গাড়িগুলিকে জরুরি পরিষেবা ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।