হামলায় জ্বলছে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে রাখা গাড়ি। ছবি: পিটিআই।
ইন্ডিয়ান রিজ়ার্ভ ব্যাটেলিয়ন (আইআরবি)-এর চৌকির পরে এ বার হিংসাদীর্ণ মণিপুরে হামলা জেলা পুলিশের সদরে। বৃহস্পতিবার রাতে চূড়াচাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপারের দফতরে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। অবাধে ভাঙচুরের পাশাপাশি দফতরের সামনে রাখা বহু যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। হামলা হয় পাশে জেলাশাসকের কার্যালয়েও।
হামলার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অন্তত ৩০। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় ছিলেন কয়েকশো। তাঁরা পুলিশ সুপারের দফতরে মোতায়েন র্যাফ জওয়ানদের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার জন্য হামলার ভিডিয়ো ফুটেজ দেখতে গিয়ে মণিপুর পুলিশের এক জওয়ানকে শনাক্ত করা হয়েছে। সিয়ামলাল পাল নামে ওই জওয়ানও ছিলেন হামলাকারীদের দলে। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল মণিপুরে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দেয়। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘাতের সূচনা হয়েছিল।
অশান্তি ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় একাধিক কেন্দ্রীয় বাহিনী। কিন্তু তার পরেও হিংসা থামেনি। এখনও পর্যন্ত সে রাজ্যে নিহত প্রায় দু’শো জন। আহত হাজারের বেশি। ঘরছাড়া হয়েছেন যুযুধান দুই জনগোষ্ঠীর ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। সম্প্রতি কুকি জনগোষ্ঠীর জঙ্গি সংগঠনগুলি ধারাবাহিক ভাবে মণিপুর পুলিশ এবং আধাসেনার উপর হামলা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাজধানী ইম্ফলের চিঙ্গারেল-তেজপুরে আইআরবি-র একটি চৌকিতে হামলা চালায় সশস্ত্র জনতা। চৌকিতে মোতায়েন জওয়ানরাও পাল্টা গুলি চালান। সংঘর্ষে এক জন নিহত হন।