প্রধানমন্ত্রীর ১০ উক্তি তুলে ধরল আনন্দবাজার অনলাইন। ছবি: টুইটার থেকে।
তাঁর ‘মনের কথা’র পুরনো ঝাঁপি খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জানালেন, বছর ন’য়েক আগে দেশবাসীর সঙ্গে তাঁর মনের কথা ভাগ করে নেওয়ার প্রয়োজন মনে হয়েছিল এক বিশেষ ইচ্ছে থেকে। যে ইচ্ছে গত ৫০ বছর ধরে মনের মধ্যে লালন করে আসছেন তিনি। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানই তাঁকে সুযোগ দিয়েছে সেই ইচ্ছেপূরণের। এমনই আরও নানা নতুন-পুরনো ভাবনার কথা উঠে এল রবিবার মোদীর শত পর্বের ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে।
২০১৪ সালের এক বিজয়া দশমীর দিন মোদী চালু করেছিলেন তাঁর ‘মন কি বাত’। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাস কয়েক পরেই। তার পর থেকে প্রতি মাসের শেষ রবিবার, সকাল ১১টায় অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো এবং দূরদর্শন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্প্রচারিত হয়ে এসেছে এই অনুষ্ঠান। যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদী যেমন নিজের কথা বলেছেন, তেমনই শুনেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক মানুষের কথা। আবার প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মতো নামী ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও মোদী আলাপচারিতা করেছেন এই অনুষ্ঠানেই। রবিবার ছিল প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুষ্ঠানের ১০০ তম পর্বের সম্প্রচার। শতপর্বে সেই সব পুরনো কথার মাঝেই মোদীর কণ্ঠে শোনা গেল তাঁর ইচ্ছে, স্বপ্ন এমনকি সাধনার কথাও। মোদী মনের ঝাঁপি খুলে জানালেন, ঠিক কী ভেবে ‘মন কি বাত’ শুরু করেছিলেন তিনি।
মোদী বলেছেন, ‘‘পঞ্চাশ বছর আগে আমি এই জন্য বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসিনি যে, এক দিন আমার নিজের দেশের মানুষের সঙ্গে কথা বলা দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। যে দেশবাসী আমার সব কিছু... যাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমি বাঁচতে পারি না, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারব না! আমার এই সমস্যার সমাধান করেছিল ‘মন কি বাত’। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথ দেখিয়েছিল ‘মন কি বাত’।’’
প্রধানমন্ত্রীর আরও অনেক কথাই বলেছেন তাঁর গত ন’বছরের স্মৃতিচারণে। তেমনই ১০ উক্তি তুলে ধরল আনন্দবাজার অনলাইন—
১। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের কাছ থেকে হাজারো চিঠি পেয়েছি। লক্ষাধিক বার্তা এসেছে আমার কাছে। তা পড়তে পড়তে আবেগাপ্লুত হয়েছি। সেই আবেগ মাঝেমাঝেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে আমাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিতে পেরেছি।
২। ‘মন কি বাত’ আমার কাছে অন্যদের শ্রেষ্ঠত্বের পুজো করার মাধ্যম। তাঁদের গুণের আধারে অঞ্জলি দেওয়ার মাধ্যম।
৩। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা সহজ ছিল। কিন্তু যখন ২০১৪ সালে দিল্লি এলাম, তখন দেখলাম এখানকার জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। কাজ আলাদা। দায়িত্ব-কর্তব্যও অন্য রকম। কড়া নিরাপত্তা এবং আরও অনেক পরিস্থিতির জন্য বাঁধা পড়তেই হবে। প্রথম প্রথম তাই আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করত।
৪। ‘মন কি বাত’ আমার কাছে উৎসবের মতো। এ এক এমন উৎসব যা প্রতি মাসে আসে। যেখানে আমরা মানুষের অংশগ্রহণকে উদ্যাপন করি। যা আমার কাছে মঙ্গলের উৎসব। যেখানে আমরা ইতিবাচক মনোভাবের উদ্যাপন করি। ‘মন কি বাত’ শুরু করার পর কতগুলো দিন-মাস-বছর কেটে গেল— ভাবতেই পারছি না।
৫। আমার কাছে ‘মন কি বাত’ এক থালা প্রসাদের মতো। যা জনতা জনার্দন নামের ঈশ্বরের পায়ে অর্পণ করা হয়েছে।
৬। ভারতীয় সমাজের বিস্তীর্ণ চাদরে ‘মন কি বাত’ হল জপমালার সুতোর মতো। যেটি মালার প্রতিটা পুঁতিকে শক্ত করে গেঁথে রেখেছে।
৭। ‘মন কি বাত’-এ আমরা নারীশক্তির বহু অনুপ্রেরণার গল্প শুনিয়েছি। যখনই আমরা মেয়েদের সাফল্যের কথা বলেছি, প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি।
৮। ‘বেটি বচাও, বেটি পড়াও’ থেকে শুরু করে ‘স্বচ্ছ ভারত’ আন্দোলন বা ‘খাদি প্রেম’, ‘প্রকৃতি প্রেম’— ‘মন কি বাত’-এ যে বিষয়েই কথা বলেছি, তা-ই গণ যজ্ঞে পরিণত হয়েছে। ‘সেলফি উইথ ডটার’ তো গোটা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল!
৯। আপনাদের পরিবারের সদস্য হিসাবে আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি ‘মন কি বাত’-এর জন্যই। আমরা আবার পরের মাসে দেখা করব। আবার দেশের মানুষের সাফল্য উদ্যাপন করব। আপনারা নিজেদের এবং নিজের প্রিয়জনদের খেয়াল রাখবেন।
১০। প্রতি ‘মন কি বাত’-এর পর্বেই পরের ‘মন কি বাত’-এর আলোচনার বিষয়বস্তু তৈরি হয়ে যায়। ‘মন কি বাত’ সব সময় সদিচ্ছা, কর্তব্যের ইচ্ছা, যথাযথ দায়িত্ব পালনের ইচ্ছা নিয়ে এগিয়েছে। এই ইতিবাচক মনোভাবই স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।