Yoga to heal stress

মানসিক চাপ কমবে, ভাল ঘুমও হবে, কী কী আসন রোজ অভ্যাস করা ভাল? শেখাচ্ছেন যোগ প্রশিক্ষক

উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা দূর হবে এমন কিছু আসন শেখালেন যোগাসন প্রশিক্ষক। কী ভাবে করতে হবে, কখন করা উচিত জেনে নিন খুঁটিনাটি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫৭
Yoga poses that can beat stress and improve your sleep quality

বালাসন নিয়মিত অভ্যাস করা ভাল। ছবি: ফ্রিপিক।

সর্বক্ষণ মাথায় গিজগিজ করে হাবিজাবি চিন্তা? অল্পেই উদ্বেগ বাড়ে। মন সারাক্ষণই চঞ্চল, অস্থির। অহেতুক দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত উদ্বেগ কেবল মানসিক চাপই বাড়ায় না, মারাত্মক মানসিক রোগের কারণও হয়ে উঠতে পারে। তাই মানসিক চাপ থেকে রেহাই পাওয়া খুব জরুরি। সংসার, পেশা সামলাতে-সামলাতে মন ভাল থাকে না অনেক সময়েই। সামান্য বিষয় নিয়েও তখন উৎকণ্ঠা শুরু হয়। আর দুশ্চিন্তার সময় এমন কিছু হরমোনের নিঃসরণ হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমেরও বারোটা বেজে যায়।

Advertisement

এই প্রসঙ্গে যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য্য বলছেন, “এমন কিছু যোগাসন আছে যা মানসিক চাপ কমিয়ে দিতে পারে অনেকটাই। নিয়মিত এইসব যোগাসন করলে ঘুমও ভাল হবে। আসলে এমন কিছু আসন করতে হবে যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিতে পারে। শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে, যাতে দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা দূর হয়, এমন সব আসনের প্রয়োজন আজকাল। ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ক্ষরণ যদি কম হয়, তা হলেই শরীরের ক্লান্তিভাবও দূর হবে এবং মনও ফুরফুরে থাকবে।”

কী কী আসন অভ্যাস করবেন?

বালাসন।

বালাসন। — ফাইল চিত্র।

বালাসন (চাইল্ড পোজ়)

হাঁটু মুড়ে গোড়ালির উপর বসতে হবে। এ বার শরীর এমন ভাবে বেঁকাতে হবে যাতে বুক গিয়ে উরুতে ঠেকে। শরীর টানটান রাখতে হবে। মাথা মেঝেতে রাখুন। দুই হাত সামনের দিকে প্রসারিত করুন। ওই অবস্থায় ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। যোগাসন প্রশিক্ষক অনুপের পরামর্শ, এই আসন স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুব উপকারী। সেই সঙ্গে ঘাড় ও পিঠের ব্যথা কমাতে পারে। নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে শরীর ও মন দুইই ভাল থাকবে।

উত্থানপদাসন।

উত্থানপদাসন। — ফাইল চিত্র।

উত্থানপদাসন

ম্যাটের উপর টানটান হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত পাশে রাখুন। চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড থেকে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে বাঁ পা উপরে তুলুন। হাঁটু ভাঙবেন না। মাটি থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে থাকবে বাঁ পা। পায়ের পাতা সোজা থাকবে। ডান পা টানটান করে মাটিতেই ঠেকিয়ে রাখুন। ওই অবস্থানে ৫ সেকেন্ড থেকে ডান পা একই ভাবে উপরে তুলুন। তখন বাঁ পা মাটিতে থাকবে। ৫ সেকেন্ড থেকে বিশ্রামের অবস্থানে চলে আসুন। এর পর দুই পা জড়ো করে একসঙ্গে তুলতে হবে। একই ভাবে দুই পা মাটি থেকে ৪৫ ডিগ্রি কোণে থাকবে। ওই অবস্থায় ৫-১০ সেকেন্ড থেকে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।

অনুপ বলছেন, নিয়মিত এই আসন করলে পেটের পেশি টানটান হবে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে। হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকবে। কোমরের পেশিও দৃঢ় হবে।

বদ্ধকোনাসন।

বদ্ধকোনাসন। — ফাইল চিত্র।

বদ্ধকোনাসন

সোজা হয়ে পিঠ টানটান করে ম্যাটের উপর বসুন। দুই হাঁটু ভাঁজ করে দুই পায়ের পাতা ধরে যতটা সম্ভব ভিতর দিকে টেনে আনুন। পায়ের পাতা মুখোমুখি প্রণামের ভঙ্গিতে থাকবে। পায়ের পাতা টেনে ধরে রাখতে হবে। এ বার লম্বা শ্বাস নিয়ে পিঠ বেঁকিয়ে মাথা মাটিতে স্পর্শ করুন। এই অবস্থায় ২০ সেকেন্ড থেকে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। শুরুর দিকে এই আসন করতে অসুবিধা হতে পারে। তাই পেট মুড়ে সামনের দিকে ঝুঁকতে না পারলে সোজা হয়ে বসে থাকতে পারেন। ধীরে ধীরে অভ্যাস করুন।

বিপরীত করণী।

বিপরীত করণী। — ফাইল চিত্র।

বিপরীত করণী

প্রথমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই পা একসঙ্গে করে মাটি থেকে উপরে তুলুন। এ বার হাতে ভর দিয়ে কোমর ধীরে ধীরে উপর দিকে তুলতে চেষ্টা করুন। শরীরের অবস্থান অনেকটা সর্বাঙ্গাসনের মতো হবে। প্রথম প্রথম দেওয়ালে ঠেস দিয়ে এই আসন অভ্যাস করুন। রপ্ত হয়ে গেলে, দেওয়ালে ভর না দিয়েই এই আসন করা ভাল। খেয়াল রাখতে হবে এই আসন অভ্যাস করার সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস যেন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। প্রথমে খুব বেশি ক্ষণ করার প্রয়োজন নেই। অভ্যাস হলে তার পর সময় বাড়াতে হবে। প্রথমে কোমরের তলায় উঁচু বালিশ দিয়ে এই আসন অভ্যাস করা যেতে পারে।

অনুপ বলছেন, “বিপরীত করণী সকলের জন্য নয়। হাত-পিঠে ব্যথা, গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা থাকলে এই ব্যায়াম করা যাবে না। বিপরীত করণী করানোর আগে আমরা দেখে নিই চোখের সমস্যা আছে কি না বা চশমা পরেন কি না। সেই মতো আসন অভ্যাস করানো হয়।”

যোগাসন প্রশিক্ষকের পরামর্শ, সকালে খালি পেটে এইসব ব্যায়াম অভ্যাস করা ভাল। রাতে খাওয়ার পরে এইসব আসন করতে যাবেন না। ভারী খাবার খাওয়ার অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরে আসন অভ্যাস করা যায়। অতটা সময় রাতে দেওয়া যায় না। তাই সকালে করাই ভাল। আর যদি রাতে ভাল ঘুমের জন্য আসন করতে চান, তা হলে যোগনিদ্রা অভ্যাস করা যেতে পারে। একদম শবাসনে শুয়ে থাকতে হবে। মাথা থেকে পায়ের পাতা অবধি যেন টানটান থাকে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। দুই হাত টানটান করে শরীরের পাশে থাকবে। মোবাইল না দেখে প্রতি দিন রাতে ঘুমনোর আগে এই আসন অভ্যাস করলে অনিদ্রার সমস্যা দূর হবে।

এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। যে কোনও রকম যোগাসন করার আগে যোগাসন প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে। ক্রনিক অসুখ, বাতের ব্যথা বা কোনও রকম শারীরিক অসুস্থতা থাকলে, অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে কী কী যোগাসন করা যাবে আর কোনটি যাবে না, তা জেনে নেওয়াই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement