বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ পশ্চিমবঙ্গে। —ফাইল চিত্র।
বার্ড ফ্লু-এর সংক্রমণ ফের বাড়ছে। এ দেশে এই নিয়ে আক্রান্ত দু’জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে বছর চারেকের এক শিশুর শরীরেও পাওয়া গিয়েছে ভাইরাসের স্ট্রেন। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এইচ৯এন২ বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রামক প্রজাতির সংক্রমণ হয়েছে শিশুটির শরীরে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই শিশুটিকে ভর্তি করানো হয়েছিল হাসপাতালে। ধুম জ্বরের সঙ্গেই প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ও পেটব্যথার লক্ষণ ছিল তার। পরে পরীক্ষা করে তার শরীরে বার্ড ফ্লু ভাইরাস ধরা পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তরফে জানা গিয়েছে, শিশুটির বাড়িতে হাঁস ও মুরগির খামার ছিল। সেখান থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে শিশুটির পরিবারের আর কেউ সংক্রমিত নন। কারও শরীরেই ভাইরাস পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, বার্ড ফ্লু সংক্রমণের পরে শিশুটির ফুসফুসজনিত কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছিল। তবে শিশুটি এখন সুস্থ আছে। কী ভাবে তার শরীরে ভাইরাস এল তা জানা যায়নি। শিশুটি উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা। তার পরিবারের কেউ বা তার বাড়ির আশপাশের কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। শিশুটির নাক ও গলা থেকে নেওয়া নমুনা কলকাতার একটি ভাইরাস রিসার্চ সেন্টারে পরীক্ষা করা হয়েছে। সেখানেই ধরা পড়েছে শিশুটির শরীরে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের এইচ৯এন২ প্রজাতির সংক্রমণ হয়েছে।
উল্লেখ্য, এই নিয়ে ভারতে দ্বিতীয় বারের মতো মানবদেহে এইচ৯এন২ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেল। এর আগে প্রথম বার ২০১৯ সালে এক জনের শরীরে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছিল।
বার্ড ফ্লু মানুষের জন্য কতটা বিপজ্জনক?
বার্ড ফ্লু ভাইরাস হল বিশেষ ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস। এই ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জাকে বলে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা। এর অনেক রকম প্রজাতি আছে, সবগুলিই যে ভীষণ সংক্রামক বা মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে, তেমন নয়। ভারতে আগে যে ধরনের বার্ড ফ্লু ভাইরাস ছড়িয়েছিল, তার নাম এইচ৫এন১ এবং এইচ৭এন৯। আর এখন এইচ৯এন২ প্রজাতির সংক্রমণও ধরা পড়েছে। দেশের কয়েকটি রাজ্যে মৃত পাখিদের নমুনায় এইচ৫এন১ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রজাতির খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। পাখিরা এই ভাইরাসের বাহক।
আগে মনে করা হত, বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে না। কিন্তু ১৯৯৭ সালে হু প্রথম মানুষের শরীরে এই ভাইরাল স্ট্রেন চিহ্নিত করেছিল। মৃত পাখির দেহাবশেষের সংস্পর্শে এসেই মানুষের শরীরে সেই ভাইরাল স্ট্রেন ছড়িয়েছিল বলেই মনে করা হয়েছিল।
চিকিৎসকেরা বলছেন, মানুষের শরীরে ঢুকলে করোনা ভাইরাসের মতোই দ্রুত বিভাজিত হতে পারে অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু ভাইরাস। উপসর্গও করোনা সংক্রমণের মতো। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। চোখের সংক্রমণও হতে পারে। এই ভাইরাস মানুষের শরীরের শ্বাসযন্ত্রে আগে সংক্রমণ ছড়ায়। তার পর ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়াতে শুরু করে। চিকিৎসকদের ধারণা, আক্রান্তের থুতু বা লালার মাধ্যমে ভাইরাস সুস্থ মানুষের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।