প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেলে ‘অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস’ হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। ছবি: ফ্রিপিক।
বার্গার, পিৎজ়া, নাগেটস, সসেজ-সালামি দেখলেই জিভে জল আসে? যদি বাইরের খাবার, ভাজাভুজি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রায়ই খেতে শুরু করেন, তা হলে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে শরীরে। অনেকেরই ধারণা, এক-আধ দিন সসেজ বা বার্গার খেলে কী হবে! তাই মাঝেমাঝেই কফির আড্ডা জমে যায় গরম বেকন বা সসেজে। কিন্তু ‘রেডিয়োলজি সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা’ (আরএসএনএ)-এর বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা যেগুলিকে বলা হচ্ছে ‘আলট্রা প্রসেস্ড ফুড’, সেগুলি লাগাতার খেতে থাকলে ওজন তো বাড়বেই, পাশাপাশি অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। বাতের ব্যথা-বেদনা কোনওদিনই ছিল না এমন কয়েক জনকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়ে এমন দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষক জ়েহরা আক্কায়া ও তাঁর সতীর্থরা ৬৬৬ জনকে নিয়ে সমীক্ষাটি চালাচ্ছেন। দেখা গিয়েছে, ষাটের বেশি বয়স এমন শতাধিক নারী ও পুরুষ স্থূলত্বের শিকার। এর কারণ হল, তাঁর খাদ্যতালিকায় সুষম খাবারের বদলে প্রক্রিয়াজাত খাবারেরই আধিক্য রয়েছে। সেই কারণে তাঁদের ওজন বেড়েছে উত্তরোত্তর। শুধু তা-ই নয়, এমআরআই স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যতে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারে নুন, চিনি, ফ্যাটের পরিমাণ বেশি। এই ধরনের খাবারে ফাইবারের পরিমাণ কম এবং অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট এতটাই বেশি থাকে, যার কারণে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। সসেজ, বেকন, হটডগের মতো খাবার যে প্রক্রিয়াজাত মাংস দিয়ে তৈরি হয় তা সংরক্ষণের জন্য এমন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা শরীরে গেলে নানা রকম সমস্যা তৈরি হতে পারে। যেমন, গবেষকেরা দেখেছেন এই সব রাসায়নিক টাইপ ২ ডায়াবিটিস, ক্যানসারের ঝুঁকি বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি, এমন খাবার রোজ খেতে থাকলে পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়ের জটিল অসুখের ঝুঁকিও বাড়ে।
গবেষণা বলছে, দৈনিক ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস খেলে তার থেকে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। তা কী রকম? গবেষকেরা জানাচ্ছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেলে কোষে মেদ জমতে থাকে, যা অস্থিসন্ধিতে চাপ দেয়। বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থল, অর্থাৎ অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে বাত হয়। এতে ব্যথা হওয়া সঙ্গে সঙ্গে চলাফেরায়ও সমস্যা হতে শুরু করে। দু’টি হাড়ের অস্থিসন্ধিতে রয়েছে কার্টিলেজ। এই কার্টিলেজগুলির ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে বাতের সমস্যা শুরু হয়। তাই এই ধরনের খাবার না খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকেরা।