Rules and Diet after Workout

শরীরচর্চার পরেই ঝিমুনি আসছে? কোন কোন অভ্যাস রপ্ত করলে ক্লান্তি দূর হবে নিমেষে?

ব্যায়াম করার পরেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। শরীর যেন আর টেনে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। দিনের পর দিন ক্লান্তি থাকলে তা চিন্তার ব্যাপার। যাঁরা এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁরা জেনে নিন কী করবেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ১২:১৮
Tips to power you through and rebound quickly after being fatigued

ক্লান্তি কাটাতে কী কী করবেন, জেনে নিন। ছবি: ফ্রিপিক।

শরীরচর্চা করার পরেই প্রচণ্ড ঝিমিয়ে পড়ছেন? শরীর জুড়ে ক্লান্তি যেন কাটতেই চাইছে না। গায়ে-হাত-পায়ে ব্যথা যদিও বা সামলে উঠলেন, কিন্তু ক্লান্ত শরীরকে আর টেনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। যাঁরা জিম করেন, তাঁরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন বেশির ভাগ সময়েই। জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাম ঝরানোর পরে আর দৈনন্দিন কাজ করার উৎসাহ পাচ্ছেন না, এমন অনেকেই আছেন। হয়তো সকাল সকাল জিমে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন যে আর অফিসে যেতে ইচ্ছে করছে না। অথবা টানা কিছু দিন জিমে গিয়ে কসরত করার পরে এতই ক্লান্তি আসছে যে শরীরচর্চায় ইতি টেনে দিচ্ছেন অনেকেই। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগই বলছেন, শরীরচর্চা সেরে ওঠার পরে এত বেশি ঝিমুনি আসছে যে, কোনও কাজ করতেই ইচ্ছে করছে না। ক্লান্তি আসতেই পারে, তবে তা হয় সাময়িক। যদি মাসের পর মাস ক্লান্তির ঘোর থেকে বেরিয়ে আসতে না পারেন, তা হলে কিন্তু চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে।

Advertisement

এই ক্লান্তির কারণ অনেক। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, “দিনের পর দিন শারীরিক কসরত না করা, বেশি ওজন, কম ঘুম, জল কম খাওয়া, পুষ্টির ঘাটতি ও মানসিক চাপ এই ক্লান্তির অন্যতম কারণ। তাই জীবনযাত্রার ধরন বদলালেই ক্লান্তি থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।” তার জন্য কী কী করতে হবে?

১) ব্যায়াম করলে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যায়। শম্পা বলছেন, শরীর আর্দ্র রাখতে যথেষ্ট পরিমাণ জল খাওয়া প্রয়োজন। শরীরচর্চা করে আসার পর সময়ান্তরে জল খেতেই হবে। অন্তত ১০ থেকে ১২ গ্লাস জল, অর্থাৎ আড়াই থেকে তিন লিটার জল খেতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে হবে ফলের রস। ক্লান্তি যদি খুব বেশি হয় তা হলে লেবুর রস খান, মুসাম্বি, পাতি লেবুর রস খুবই উপকারী। দেখবেন লেবুর রস খেলে নিমেষেই ক্লান্তি কেটে যাবে।

২) সোডিয়াম বা পটাশিয়ামের মাত্রার তারতম্য হলেও ক্লান্তিভাব থাকে। শম্পার কথায়, “সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখতে ওআরএস খেতে হবে। বাড়িতে বানালে নুন আর জলের অনুপাত ঠিক থাকে না অনেক সময়েই। তাই কিনে খাওয়াই ভাল। আর পটাশিয়ামের জন্য প্রচুর পরিমাণে ফল খেতে হবে। মরসুমি প্রায় সব ধরনের ফলেই পটাশিয়াম থাকে। ডাবের জল খেতে পারেন, লেবু, কলা নিয়ম করে রাখুন ডায়েটে।”

৩) শরীরচর্চা যদি নিয়ম করে করেন, তা হলে কিন্তু খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতেই হবে। শরীরকে কসরত করালে তাকে পুষ্টিকর খাবারও দিতে হবে। সকালে যদি শরীরচর্চা করেন, তা হলে প্রাতরাশ কখনওই বাদ দেবেন না। বাড়িতে দই বা দুধ, যা-ই থাকুক, তার সঙ্গে পছন্দের কিছু ফল মিশিয়ে নেওয়া যায়। স্মুদি বানিয়ে খেয়ে নিন। শরীরচর্চার পরে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারলে ভাল হয়। তা হলে শরীর সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে না। অ্যালার্জি না থাকলে ডিম রোজ রাখতে পারেন ডায়েটে। নিরামিষ খেলে দই, পনির খান।

৪) শরীরচর্চা করার অন্তত এক ঘণ্টা পর ভারী খাবার খেতে হবে। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট কী পরিমাণে খাবেন তা পুষ্টিবিদের থেকে জেনে নেওয়াই ভাল। শম্পা পরামর্শ দিচ্ছেন, শরীরচর্চার আগে বা পরে নিয়ম করে খেলেন আর সারা দিন যা খুশি খেয়ে ফেললেন, তেমন করলে ওজন তো কমবেই না বরং ক্লান্তি আরও বাড়বে। চেষ্টা করতে হবে কার্বোহাইড্রেট কম খাওয়ার। শরীরচর্চার পরে খিদে পাবে খুব। তখন একগাদা ভাত বা রুটি খেয়ে ফেললে হবে না। শরীর বুঝে ডায়েট ঠিক করতে হবে। সে জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

৪) শরীরে জোর পেতে বাদাম খেতে হবে। আখরোট, কাঠবাদাম রোজ খাওয়ার চেষ্টা করুন। তবে পরিমিত খেতে হবে। আখরোট ২টির বেশি নয়, কাঠবাদাম ৩ থেকে ৪টি খেতে হবে। এই বাদামগুলিতে রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা শারীরিক ক্লান্তি, দুর্বলতা কমিয়ে দিতে পারে। তবে কিডনির রোগ বা বাতের ব্যথাবেদনা থাকলে বাদাম খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে।

৫) রক্তাল্পতা থাকলেও ক্লান্তি বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে রোজের ডায়েটে মাছ, মাংস বা ডিম রাখতেই হবে। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসব্জি খেতে হবে।

৬) যদি দেখেন খুব পায়ে ব্যথা হচ্ছে, তা হলে নুন-গরম জল করে দুই পায়ের পাতা ডুবিয়ে বসে থাকুন। ২০ মিনিট সময় দিন। তার পর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নিন। দেখবেন শরীরের ব্যথা, ক্লান্তি ভাব নিমেষে দূর হবে।

৭) জিমে গিয়ে কার্ডিয়ো বা ওয়েট ট্রেনিং করুন অথবা যোগাসন— শরীরচর্চার পরে স্ট্রেচিং করতেই হবে। এতে পেশির আরাম হয়, রক্ত চলাচল ভাল হয়। শরীরচর্চার পরে স্ট্রেচিং না করলে পেশির ক্লান্তি বাড়ে। নির্দিষ্ট নিয়মে শরীরের বিভিন্ন সন্ধি ও পেশি বিভিন্ন দিকে নাড়িয়ে-চাড়িয়ে নিলে শরীরের নমনীয়তা বাড়ানো যায়৷ সকালে ১০ মিনিট ও বিকেলে ১০ মিনিট স্ট্রেচিং করতে পারলে ক্লান্তি ভাব দূর হয়ে যাবে।

৭) শরীরচর্চা করলে বিশ্রামও নিতে হবে। বিশ্রাম মানে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি বা আলসেমি করে কাটানো নয়। রাতে টানা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুমোনোর ঘণ্টা দুয়েক আগে রাতের খাওয়া সেরে ফেলুন। কফি ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন। দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা গায়ে রোদ লাগান। তা হলেই আর ক্লান্তি আসবে না।

আরও পড়ুন
Advertisement