নতুন বছরে কেমন ডায়েট মেনে চললে সুস্থ থাকবেন? ছবি: ফ্রিপিক।
সংসারের ঝক্কি সামলে কোনও রকমে ব্যাগটা বগলদাবা করে অফিসে গিয়ে ৯টা থেকে ৬টা কী খাবেন সে চিন্তা করার সময় থাকে না। বাড়ির কাজ, সন্তানের খুঁটিনাটি খেয়াল রাখা, দায়িত্ব শেষে নিজের তৈরি হওয়ার সময়টাতেই কুরুক্ষেত্র বেধে যায়। প্রাতরাশ না খেয়েই অফিসে ছোটেন অনেকে। তার পর সারা দিন চা-কফির সঙ্গে দেদার ফাস্ট ফুড খাওয়া। ফলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা যেমন বাড়ে, তেমনই অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে খেতে অচিরেই জটিল রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।
সংসার এবং কর্মক্ষেত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় উঠছে অনেকেরই। ফলে কম বয়সেই স্থূলতা, থাইরয়েড, ডায়াবিটিসের মতো নানাবিধ শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বয়স অনুপাতে ডায়েট সঠিক হওয়াই প্রয়োজন। মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই সুষম খাবার খাওয়া জরুরি। আর কেবল খেলেই হবে না, ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।
কেমন হবে ডায়েট?
পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, সকালে কখনওই খালি পেটে অফিসে বেরোবেন না। কারণ অফিসে ঢুকেই কাজের চাপ, তা সামাল দেওয়ার জন্য বাড়তি শক্তির দরকার হয়। সেই শক্তির জোগান আসবে প্রাতরাশ থেকেই।
প্রাতরাশ
আটার রুটি-সব্জি (কম মশলার), ওট্স, মিলেট খেতে পারেন। অনেকেই সকালে ভাত খেয়ে কাজে বেরোন। সে ক্ষেত্রে ভাতের সঙ্গে খান সব্জি, মাছ, বা ডিম।
ডালিয়ার খিচুড়ি, কিনোয়া, সুজিও প্রাতরাশের জন্য ভাল। যাঁরা নিরামিষ খান, তাঁরা পনির, ছানা খেতে পারেন।
মিড মর্নিং
সাধারণত ২-৩ ঘণ্টা অন্তর খাবার খাওয়া শরীরের জন্য উপযোগী। তাই সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ প্রাতরাশ করলে, ১১টা-১১.৩০টা নাগাদ হালকা কিছু খেতেই হবে। মিড-মর্নিংয়ে খেতে পারেন ফল। একটা আপেল বা পেয়ারা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেওয়া যেতেই পারে। অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে কলাও খেতে পারেন। সঙ্গে রাখতে পারেন নানা রকম বাদাম ও বীজ।
দুপুরের খাওয়া
সকালে যাঁরা ভাত খেয়ে বেরোচ্ছেন তাঁরা দুপুরে খেতে পারেন রুটি-তরকারি। তবে প্রোটিন রাখতেই হবে। টিফিন বাক্সে রাখুন মাছ, ডিম। নিরামিষ খেলে রাখুন পনির, ছানা বা সয়াবিন। প্রাতরাশ যদি ওট্মিল বা কোনও দানাশস্য দিয়ে সারেন, তা হলে দুপুরে অল্প করে ভাত খেতেই পারেন। সঙ্গে রাখুন সব্জি, ডাল, আর যে কোনও এক রকম প্রোটিন। স্যালাড ও টক দই খেতে পারলে খুব ভাল হয়।
সন্ধ্যার টিফিন
১০টা থেকে ৫টা যদি অফিস হয়, তা হলে বাড়ি ফিরেই কিছু টিফিন করুন। সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপাদেয় টিফিন হল মুড়ি আর ছোলা। শসা, পেঁয়াজ, ছোলা সেদ্ধ দিয়ে মুড়ি মেখেও খেতে পারেন।
সন্ধ্যার সময়টা যদি অফিসে থাকেন, তা হলে চপ বা ভাজাভুজি না খেয়ে টিফিন বাক্সে রাখুন সেদ্ধ ছোলা, সেদ্ধ মুগ, বাদাম বা শুকনো মুড়ি।
রাতের খাওয়া
রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯ টার মধ্যে রাতের খাওয়া খেয়ে নেওয়া সবচেয়ে ভাল। অনেকেই আছেন যাঁদের রাত ৯টা বেজে যায় ফিরতে, রাতের খাওয়া খান ১২টার পরে। এই অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বরং বাড়ি ফিরেই চেষ্টা করুন রাতের খাওয়া সেরে ফেলার। রাতের খাওয়া হবে খুবই হালকা। যদি প্রাতরাশে বা দুপুরে ভাত খেয়ে থাকেন, তা হলে রাতে হাতে গড়া রুটি, ডাল, সব্জি খেতে পারেন। চিকেন স্ট্যু খেতে পারেন। রাতে কার্বোহাইড্রেট যতটা সম্ভব কম খাওয়া ভাল। বেশি স্যালাড রাখুন, সব্জি বেশি করে খান।
যদি রাত জেগে অফিসের কাজ করতে হয়, তা হলে কফি, ঠান্ডা পানীয় অথবা ঘন ঘন চা খাওয়া চলবে না। বেশি রাতে খিদে পেলে ম্যাগি বা জাঙ্ক ফুডও খাবেন না। বরং হাতের কাছে রাখুন ড্রাই ফ্রুট্স। বেশি করে জল খান, তাতেই শরীর ভাল থাকবে।