কী ভাবে করবেন গোরক্ষাসন? চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
খাবার হজমে বিশেষ সমস্যা না হলেও মলত্যাগ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। কোনও কোনও সময়ে তা এমন যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে যে, রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে যায়। অনেকে আবার প্রাতঃকৃত্যের পথ মসৃণ রাখার জন্য ইসবগুলের ভুসিকেই ‘জপমালা’ করে ফেলেছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে পাইল্স বা অর্শ দেখা দিতে পারে। খাওয়ার ওষুধ, মলম, যন্ত্রণার চক্র থেকে মুক্তি পেতে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করাতে হয় বহু মানুষকে। পুষ্টিবিদেরা আবার ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার, জল বেশি করে খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে যোগ প্রশিক্ষকেরা বলছেন, ব্যথা, যন্ত্রণা, রক্তপাত পর্যন্ত গড়ানোর আগেই তা বাগে আনা যেতে পারে নিয়মিত গোরক্ষাসন অভ্যাস করলে।
সংস্কৃত ‘গো’ শব্দের অর্থ গরু। ‘রক্ষক’ অর্থাৎ গরুর রক্ষাকর্তা। সহজ ভাবে বললে ‘রাখাল’। তবে এই আসনের ভঙ্গির সঙ্গে রাখালদের কোনও যোগ নেই। ইতিহাস বলছে, আদতে নাথপন্থার আদিপুরুষ গোরক্ষনাথের নামানুসারে এই আসনের নামকরণ হয়েছে। গোরক্ষাসন করা খুব কঠিন নয়। শিশু থেকে বয়স্ক, সকলেই তা অভ্যাস করতে পারেন। শিখে নিন পদ্ধতি।
কী ভাবে করবেন?
প্রথমে ম্যাটের উপর বসুন। দু’টি পা সামনের দিকে ছড়িয়ে দিন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।
এ বার দু’টি পা ভাঁজ করে কোলের কাছে টেনে নিয়ে আসুন। দু’টি গোড়ালি যতটা সম্ভব জননেন্দ্রিয় বা মূত্রথলির কাছাকাছি নিয়ে আসুন। পায়ের পাতা থাকবে প্রণামের ভঙ্গিতে।
এ বার ধীরে ধীরে পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে গোটা শরীরটা মাটি থেকে তুলে নিন। ধীরে ধীরে গোড়ালির উপর রাখুন।
চাইলে নিতম্ব গোড়ালি স্পর্শ করে থাকতে পারে। দুই হাত থাকবে দু’টি হাঁটুর উপর। এই অবস্থানে থাকুন ৩০ সেকেন্ড। ব্যালান্স ধরে রাখতে পারলে ৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকা যায়। একান্ত অসুবিধা হলে হাঁটু দু’টি মাটি স্পর্শ করে রাখা যেতে পারে।
কেন করবেন?
গোরক্ষাসন অভ্যাস করলে ঋতুস্রাবজনিত সমস্যাও বশে থাকে। কোমর, নিতম্ব, ঊরু, পা, হাঁটুর নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। জরায়ু এবং মূত্রথলির পেশি মজবুত হয়। দেহের নিম্নাংশে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। গ্যাস, অম্বল এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সতর্কতা:
মেরুদণ্ডে চোট, গেঁটে বাত, কোমরে ব্যথা-বেদনা কিংবা সায়াটিকার সমস্যা থাকলে গোরক্ষাসন করতে যাবেন না। গোড়ালিতে কোনও ভাবে আঘাত লেগে থাকলেও সমস্যা হতে পারে। যাঁদের প্রস্টেট, অণ্ডকোষ-জনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও এই আসন করার আগে প্রশিক্ষকের পরামর্শ নেবেন। অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য এই আসন নিষিদ্ধ।