কী ভাবে করবেন জঠর পরিবর্তনাসন? চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
সপ্তাহান্তে প্রায়ই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দিল্লি কিংবা বম্বে রোড ধরে যত দূর চোখ যায়, পাড়ি দেন। এ দিক-সে দিক ঘুরেফিরে, খাওয়াদাওয়া করে ঘণ্টা পাঁচেক পর আবার ফিরেও আসেন। রাতে যখন বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেন, পিঠ-কোমর চড়চড় করে। কোমরে বালিশের ঠেকনা দিয়ে কোনও পাশ ফিরে আরাম পাওয়া যায় না। কোমরের ব্যথা কমানোর মলম বা স্প্রে ব্যবহার করে সাময়িক আরাম হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তবে যোগ প্রশিক্ষকেরা বলছেন, নিয়মিত জঠর পরিবর্তনাসন অভ্যাস করলে মুশকিল আসান হতে পারে।
সংস্কৃতে ‘জঠর’ শব্দের অর্থ হল পেট। বলা ভাল তলপেট। ‘পরিবর্তন’-এর অর্থ বদল। এ ক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থে বদল নয়, তবে স্থান কিংবা পাশ বদল বলা যেতে পারে। এই ভঙ্গি অভ্যাস করার সময়ে মূলত দেহের নিম্নাঙ্গকে বিশেষ ভাবে সঞ্চালন করতে হয়। অনেকটা ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো। ইংরেজিতে যাকে ‘টুইস্টেড’ বা ‘রিভলভ্ড অ্যাবডোমেন পোজ়’ও বলা হয়। শিখে নিন পদ্ধতি।
কী ভাবে করবেন?
প্রথমে ম্যাটের উপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। দুই হাত দেহের দু’পাশে প্রসারিত করুন। কাঁধ এবং দু’হাত থাকবে একই সরলরেখায়। উপর থেকে অনেকটা ইংরেজি অক্ষর ‘টি’-এর মতো দেখাবে। শ্বাস-প্রশ্বাস যেন স্বাভাবিক থাকে।
এ বার ধীরে ধারে দু’হাঁটু ভাঁজ করে একসঙ্গে জড়ো করে রাখুন। দুই গোড়ালি প্রায় নিতম্বের কাছাকাছি নিয়ে আসুন। পায়ের পাতা থাকবে মাটিতে।
এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে পায়ের অংশটি প্রথমে বাঁ পাশে নিয়ে যান। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, গোটা শরীরটা যেন বাঁ দিকে কাত হয়ে না যায়।
শুধুমাত্র শরীরের নীচের অংশটা এক পাশে ঘুরিয়ে প্রায় মাটির সঙ্গে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। একান্ত না পারলে অন্তত মাটির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কোমর থেকে পা দু’টি যখন বাঁ দিকে কাত করছেন, ঠিক সেই সময়ে মাথা ঘুরিয়ে রাখুন ডান দিকে। কোমর থেকে নিম্নাঙ্গের পেশিতে টান অনুভব করবেন।
এই অবস্থানে থাকুন অন্তত ৩০ সেকেন্ড। চাইলে ৬০ সেকেন্ডও রাখা যায়। তার পর আবার ফিরে আসুন প্রথম অবস্থানে।
শ্বাস নিয়ে একই ভাবে কোমরে মোচড় দিয়ে থেকে পা দু’টি এ বার নিয়ে যান দেহের ডান পাশে। মাটি স্পর্শ করতে পারলে ভাল হয়। না পারলেও অসুবিধা নেই। তবে এই সময়ে কিন্তু মাথা থাকবে বাঁ দিকে। এই অবস্থান ধরে রাখুন অন্ততপক্ষে ৩০ সেকেন্ড। তার পর আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসুন।
এক বার বাঁ দিক, তার পর আবার ডান দিক— এই ভাবে গোটা একটি রাউন্ড সম্পূর্ণ হবে। অন্ততপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বার এই ভাবে অভ্যাস করতে পারেন জঠর পরিবর্তনাসন।
কেন করবেন?
নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে ঘাড়, কাঁধ, মেরুদণ্ড, কোমর, নিতম্বের পেশির নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। এই আসন হজম সংক্রান্ত সমস্যা নিরাময় করে। মানসিক চাপ, অবসাদ, উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। জঠর পরিবর্তনাসন অভ্যাস করলে সায়াটিকার ব্যথাতেও আরাম মেলে। মহিলাদের জরায়ু এবং পুরুষদের মূত্রাশয়-ঘটিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সহায়তা করে।
সতর্কতা:
তলপেটে ব্যথা বা অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে এই আসন অভ্যাস করা যাবে না। পাঁজর, গোড়ালিতে চোট থাকলে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া প্রয়োজন। লাম্বার স্পাইন বা স্লিপ্ড ডিস্কের সমস্যা থাকলেও জঠর পরিবর্তনাসন অভ্যাস করতে যাবেন না।