স্লিপ অ্যাপনিয়ার উপসর্গ কী? ছবি: শাটারস্টক
ঠিক সময়েই ঘুমোতে যাচ্ছেন। কিন্তু চোখে ঘুম কই? কিছুতেই যেন ভাল ঘুম হচ্ছে না! ফলে দিনের বেলায় রয়ে যাচ্ছে ঘুম ঘুম ভাব, ক্লান্তি। এরই সঙ্গে বাড়ছে নাক ডাকার সমস্যা। অনেকেই অবশ্য নাক ডাকেন, পরিবারের অভিযোগ ছাড়া তেমন করে কেউই কখনও এই সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামান না। এ বার কিন্তু সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। এই সবই কিন্তু হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, যাঁদের এই স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা আছে তাঁদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। আধুনিক জীবনযাত্রা ও পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসের ফলে ঘুমের মধ্যেও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে বলে মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র। এমনিতেই শরীরে অতিরিক্ত মেদ, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ইত্যাদি কারণে ঘুমের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই। সম্প্রতি নাক ডাকার অভ্যাসকেও খুব একটা ‘নিরাপদ’ বলে ভাবতে রাজি নন চিকিৎসকরাও। শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা ছাড়াও স্লিপ অ্যাপনিয়াকেও এই অতিরিক্ত নাক ডাকার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণেও নাক ডাকার এই সমস্যা আসতে পারে, যা বাড়িয়ে তুলছে হৃদ্রোগ। ডেকে আনছে মৃত্যুর ঝুঁকি।
কেন হয় এই সমস্যা?
যাঁদের ওজন বেশি, তাঁদের ঘুমের সময়ে শ্বাসনালির উপর চাপ বেশি পড়ে। ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। মদ্যপান ও ধূমপানের মতো জীবনযাত্রাগত কিছু কারণও এই অসুখের আশঙ্কা বাড়ায়। আবার অনেকেই ঘুম ভাল হচ্ছে না ভেবে ঘুমের ওষুধ খান। তাতে হিতে বিপরীত হয়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিসের মতো রোগ থাকলেও এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগের থেকে সচেতনতা বেড়েছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, টনসিল ও অ্যাডেনয়েড গ্ল্যান্ড বড় থাকলে শিশুদেরও স্লিপ অ্যাপনিয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সহজেই সম্ভব।
উপসর্গ কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার মূল উপসর্গই নাক ডাকা। এ ছাড়াও সারা দিন একটানা ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাবের সঙ্গে আচমকাই খিটখিটে মেজাজের শিকার হলে এই অসুখ বাসা বাঁধছে কি না, তা নিয়ে সাবধান হোন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমিয়ে পড়ার পর ঘাড় ও গলার পেশি শিথিল থাকে। ফলে স্লিপিং ডিজ়অর্ডার থাকলে শ্বাসযন্ত্রে চাপ পড়ে ও শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধা পায়। এতে মস্তিষ্ক ও শরীরের কোষগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ হঠাৎ করেই অনেকটা কমে যায়। ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রভাবে আকস্মিক শ্বাসপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে মৃত্যু হতে পারে।
নিয়ন্ত্রণ করবে কী ভাবে?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা আছে বুঝলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসার সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে মন দিন। খাওয়ার ঠিক পরেই শুয়ে না পড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় যোগব্যায়াম করুন। হজমের সমস্যা কমলে নাক ডাকার সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়া যায়। শোয়ার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন। চিত হয়ে না শুয়ে এক পাশ ফিরে শুলে শ্বাসযন্ত্রের উপর চাপ কম পড়ে।